বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক! তবুও ম্যাচ শেষে সঙ্গী একরাশ হতাশা। এমন ট্র্যাজেডি মেনে নেওয়া সতিই কঠিন। ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পেও পারছিলেন না রুক্ষ বাস্তবতাকে হজম করতে। তবে এই পরাজয়েও বীরের অমরত্ব অর্জন করেছেন তিনি!
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসিরা যখন বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে উঠেছেন, তখন মাঠের এক কোণে কুঁকড়ে বসে থাকতে দেখা গেল ফ্রান্সের ১০ নম্বর জার্সিধারীকে। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু দু’হাতে মুখ ঢেকে তা যেন আড়াল করতেই চাইলেন। চোখের পানি কাউকে দেখতে দেবেন না বলেই হয়তো!
যদিও তা ঠিকই নজরে পড়ল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের। গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসে ফরাসি সুপারস্টারকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিলেন তিনি। হয়তো তাকে বোঝাচ্ছিলেন, “তুমি যা করেছে, তা কম নয়। কিন্তু ঈশ্বর ট্রফিটা মেসির জন্যই তুলে রেখেছিলেন।”
কিন্তু বারবার পিছিয়ে পড়েও সমতা ফেরানোর কারিগরের হাহাকার তাতে থামার ছিল না। থামলও না। নিজের মনেই যেন পুড়তে লাগলেন তিনি।
প্রতিপক্ষের ট্র্যাজিক হিরোকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজও। যাকে ফাইনালে তিন-তিনবার পরাস্ত করেছেন এমবাপ্পে। তবুও বিপক্ষ নায়ককে কুর্নিশ জানাতে এসেছিলেন তিনি।
চলতি বিশ্বকাপে সর্বাধিক আটটি গোল করে স্বর্ণের বুট অবশ্য পেলেন এমবাপ্পেই। কিন্তু বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটির কাছে ব্যক্তিগত সাফল্য যে নেহাতই মূল্যহীন। মঞ্চে উঠে পুরস্কার নেওয়ার সময় সেজন্যই উচ্ছ্বাসহীন দেখাল তাকে।
২০১৪ সালে মেসিকেও তো এমনই দেখিয়েছিল। সেই যন্ত্রণার ভাগীদার বলেই ডায়াসে তাকে সান্ত্বনা জানালেন ক্লাব দলের সতীর্থ।
ম্যাচের শেষ লগ্নে দু’মিনিটের একক ঝড়েই সব ওলটপালট করে দিয়েছিলেন এমবাপ্পে। এরপর অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলের পর সবাই যখন ধরেই নিয়েছিল আর্জেন্টিনাই চ্যাম্পিয়ন, তখন ফের পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে আবারও লড়াইয়ে ফেরান এমবাপ্পে। তবুও খেতাব জেতা হল না।
ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমের গলাতেও ঝরে পড়ল বিষাদের সুর। তিনি বলেন, “চোট সমস্যা, ভাইরাস, অনেক প্রতিকুলতা অতিক্রম করে ফাইনালে খেলতে নেমেছিলাম আমরা। কিন্তু প্রথম ৬০ মিনিট ম্যাচে আর্জেন্টিনারই আধিপত্য ছিল। তবে তারপর ছেলেরা অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওদের নিয়ে আমি গর্বিত। আর এমবাপ্পের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ১৯৬৬ সালের পর ফের বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক! এর শেষটা মধুর হলেও পারত।