অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় শীতের মধ্যে অন্তত ৫০টি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করছেন জয়নাল শেখ।
সংগ্রামী জয়নাল শেখ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী গ্রামে বাসিন্দা। জানা গেছে, তার দুজন ছেলে সন্তান আছে। তবে তারা মা-বাবার খবর রাখেন না। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন জয়নাল। কোনো জমিজমাও নেই। তার আয়ের একমাত্র মাধ্যম খেজুর গাছ কাটা। তাই শীতের মৌসুমেও তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে প্রতিদিন খেজুর গাছে উঠতে হচ্ছে তাকে।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে খেজুর গাছ কাটার সময় কথা হয় জয়নাল শেখের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি অনেক বছর ধরে খেজুর গাছ কাটি। এবারও ৫০টার মত খেজুর গাছ কেটেছি। প্রতিদিন এসব গাছ থেকে ১৫-২০ হাড়ি রস সংগ্রহ করি। এই রস জ্বালিয়ে ১০-১২ কেজির মতো গুড় তৈরি করি। পরে সেই গুড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। অনেকে আবার বাড়ি থেকেও কিনে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি গুড় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এতে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সারাবছর আমার সংসার মোটামুটি ভালোই চলে যায়।
৭৫ বছর বয়সে এত কষ্ট করে কেন খেজুর গাছ কাটেন এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ জয়নাল মুখ মলিন করে বলেন, শখ করে কাটি না, পেটের তাগিদে কাটতে হয়। আমার দুই ছেলে আছে। ওরা কোনো কাজকর্ম ঠিকমত করত না। পরে ওদের বিয়ে দিয়ে আলাদা সংসার করে দিয়েছি। ওদের উপার্জন দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঠিকমত চললেও আমাদের খবর রাখে না।
তিনি বলেন, এই বয়সে আমার অবসরে থাকার কথা। সন্তানরা উপার্জন করে এনে আমার হাতে দেবে, আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে টুকটুক করে বাজার করে আনব। নাতি-নাতনিদের নিয়ে খেলাধুলা করব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই সুখ আমাদের কপালে নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই বয়সে খেজুর কাটতে হচ্ছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান যদুনন্দী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর বর মোল্যা বলেন, জয়নাল ৭৫ বছর বয়সে ৫০টি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করছেন, সেই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন। এই বয়সে তার তো ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারার কথাই না। তবু অভাবের তাড়নায় খেজুর গাছে উঠতে হচ্ছে তাকে।