কক্সবাজার টেকনাফে রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানি দিয়ে তৈরি হচ্ছে লবণ। ফলে লবণের গুণগত মান যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি ওই লবণ খেয়ে সৃষ্টি হতে পারে মানবদেহে কঠিন ও জটিল রোগ।
শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায় টেকনাফের ৪টি ক্যাম্পের বসবাসরত ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বিভিন্ন পন্থায় তৈরি হওয়া বর্জ্য মিশ্রিত পানি দিয়ে শ্রমিকরা তৈরি করছে লবণ। এতে আরও দেখা যায়, লবণ তৈরির বীজতলায় পলিথিন বা ত্রিপলের উপর যে পানি রেখেছে সে পানিতে বর্জ্যরে ফেনা ভাসছে ও বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
যা পরে বাতাসে বা রোদে শুকিয়ে পানির সঙ্গে মিশে লবণে পরিণত হবে। যার কারণে ওই লবণের আসল রং নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। তাই লবণ শিল্পকে রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানি থেকে রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নিলে লবণ শিল্পের উৎপাদন চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ভবিষ্যতে জীবিকা হারাতে পারে ৫ হাজার পরিবার, ২শ জন লবণ ব্যবসায়ী, ৩ হাজার শ্রমিক, ৮শ একর জমির মালিক।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, এখান থেকে যে উৎপাদিত লবণ জাতীয় চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বা কলকারখানায় যাচ্ছে। সে লবণ সব অঞ্চলের লবণের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। লবণের এমন অবস্থা জানলে এ এলাকার লবণ আর কেউ ক্রয় করতে চাইবে না। এ বিষয়ে টেকনাফ বিসিক লবণ শিল্প দপ্তরের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় চাষি, লবণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে হ্নীলা ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে জানান, রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন টয়লেটের, রান্নাবান্নার, গোসলখানা ও অনেকের টয়লেট পরিষ্কারের পানি ড্রেনে ফেলে দেয়। যার ফলে ওই ড্রেনের মুখ বিভিন্ন খালের মাথায় সংযুক্ত থাকায় সব ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি খালে চলে যায়।
এদিকে অধিকাংশ স্থানীয় জানান, বর্জ্য নিষ্কাশনে কয়েকটি এনজিও সংস্থা কিছুটা কাজ করলেও সিংহভাগ বর্জ্য মিশ্রিত পানি অনেক ছোট-বড় খাল দিয়ে সরাসরি নাফ নদীতে চলে যায়। যার ফলে ওই ছোট ছোট খাল থেকে লবণ উৎপাদনের জন্য যে পানি উত্তোলন বা ব্যবহার হয়, তা রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত বলে জানা গেছে।
শুধু তা নয়, হ্নীলা ইউপির আলীখালী, লেদা, আবুবক্করের রাস্তার মাথা, জাদিমুড়া খালসহ অনেক এলাকার খালে বাঁধ নির্মাণ করে রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানি আটকে রেখেছে লবণ চাষিরা। যাতে নাফ নদী থেকে জোয়ারে আসা পানি রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানির সঙ্গে মিশতে না পারে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন লবণ চাষিরা।
লেদা ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জাফর আলম যুগান্তরকে জানান, রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানির কারণে ২ হাজার কানি লবণের মাঠ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে পুকুর তৈরি করে ওই পানি লবণ উৎপাদনের পানির সঙ্গে যাতে মিশ্রিত না হয় সে ব্যবস্থা করতে কয়েকটি এনজিও সংস্থা লবণ চাষিদের সঙ্গে আলোচনা সভা করে বারবার কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই। না হলে আমাদের টেকনাফের লবণ শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
লবণ শ্রমিক দেলোয়ার যুগান্তরকে জানান, আমরা রোদে পুড়ে এত কষ্ট করে যে লবণ উৎপাদন করি তা আমরা খাই না। রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানির কথা মনে উটলে আরও খারাপ লাগে। আমাদের বাড়িতে লবণ প্রয়োজন হলে বাইরের মাঠ হতে ক্রয় করি, যেখানে রোহিঙ্গাদের বর্জ্য নেই।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার এনামুল হক যুগান্তরকে জানান, রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানি দিয়ে হয়তো লবণ উৎপাদন হবে! কিন্তু সেগুলো সেবনে মানবদেহে ফুসফুসের শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্ম রোগ, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।
তিনি আরও জানান, হয়তো নদীর ও বর্জ্য মিশ্রিত পানি দিয়ে লবণ তৈরি হবে, কিন্তু তা খাওয়ার উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলে। টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, রোহিঙ্গাদের বর্জ্য মিশ্রিত পানির কারণে লবণ শিল্পে ক্ষতি হোক আমরা চাই না। তবে কেউ যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন তা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।