‘চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব নয় বলে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। কাজেই সেখানে সরকারের কিছু করণীয় নেই।
’
সোমবার (২ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম জিয়ার ছোটভাই যে আবেদন করেছিলেন সেখানে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন। আমরা সে আবেদন পাওয়ার পর পর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি তাদের মতামতের জন্য। কারণ, এ বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে।
গতকাল (রোববার) আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দিয়ে আবেদনটি আবার আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। সেখানে মতামত তাদের পক্ষে আসেনি। এটা দেওয়া সম্ভব নয় বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে জানিয়েছে। কাজেই এখন আমাদের আর কিছু করণীয় নাই বলে আমি মনে করছি। ’
এ সময় সাংবাদিকদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরও দেন মন্ত্রী। আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া মতামতের সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়ার পরিবারকে জানানো হবে কিনা জানতে চাইলে কামাল বলেন, ‘উনারা যদি জানতে চান আমরা অবশ্যই জানিয়ে দেব। তবে এরই মধ্যে উনি (শামীম ইস্কান্দার) জেনে গেছেন। তাদের কোনো কিছু জানার থাকলে, কথা বলতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত যেটা সেটা পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। ’
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু বলেছেন খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত…!! ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। একটা যদি অঘটন ঘটে সেটার বিচার হয়। সেটা আপনারা সবসময় দেখে আসছেন। আমাদের আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সেখানে আমাদের কর্তৃত্ব নেই। রাষ্ট্রপতি কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এটাই তো তারা ইঙ্গিত করছেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় যে মতামত দিয়েছে, সেটাই আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি। এর বাইরে আমাদের কিছু করণীয় নেই। ’
হাজী সেলিমসহ আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এ সুবিধা (বিদেশে চিকিৎসা) নিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করলে সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, ‘হাজী সেলিম কিন্তু দণ্ডিত নন। তার বিচার চলছে। ’
রোববার (১ অক্টোবর) আইনমন্ত্রী বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়। সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না। ঠিক সেই ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা ১,২,৩,৪,৫,৬ ব্যাখ্যা করে আমরা আমাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে আমরা মতামত দিয়েছি- ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে সেটা পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রানজাকশন। এটা খোলার আর কোনো উপায় নেই।
খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে বিদেশ পাঠাতে চাইলে কোন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে, সেটিও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তাকে এখন যে আদেশ বলে ৪০১ ধারায় দুটি শর্তে ছয়মাসের জন্য সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেটা বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দী হন তিনি। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।