রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর ) প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ভোলাকোট ইউনিয়নে স্থানীয় অসহায় মানুষদের জিম্মি করে ১৬ একর কৃষি জমি নিজের নামে দখল করায় অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দীঘ তদন্ত ও শুনানী শেষে উক্ত কৃষি জমির চারপাশের বাঁধ ভেকু মেশিন দিয়ে উচ্ছেদ করছেন উপজেলা প্রশাসন।
গত প্রায় ৪ বছর যাবত জাহিদুল ইসলাম জুয়েল ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট গ্রামের ভোলাকোট কেন্দ্রীয় ঈদগাঁয়ের পুর্ব পাশে^র স্থানীয় অসহায় মানুষদের ১৬ একর কৃষি জমি দখলে রাখেন। দখল করে সেখানে মাছের ঘের, কলা ও লেবু বাগান করে সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট গ্রামের মৃত ছৈয়দ আহম্মেদের ছেলে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল। এ ঘটনায় উক্ত কৃষি জমির মালিক আরিফ হোসেনসহ ভুক্তভোগীরা দুইটি নন জিআর ও ৩টি সিআর মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নিজের জমি নেই এক বিঘেও, অথছ বছরের পর বছর স্থানীয় অসহায় মানুষদের জিম্মি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল আমাদের জমি জোরপূর্বক জবরদখল করে মাদকের সা¤্রাজ্য বানিয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত ভোলাকোট ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ও বর্তমানে আওয়ামীলীগ নেতা। তার পালিত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি, উপরুন্ত উক্ত জমির মালিক আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ও জমির মালিকদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করেন জাহিদুল ইসলাম জুয়েল।
এ ব্যপারে একই এলাকার আবদুল আজিজ, মাওলানা গোলাম রসূল, আরিফ হোসেন, শাকিল মাহমুদ, জাহাঙ্গীর ভূইয়া, রুহুল আমিন, আবদুল কাদের, কবির হোসেন, ফরিদ হোসেন, জসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, জাহিদ হাসান ও নয়ন হোসেন বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক, রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি)র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় উক্ত কৃষি জমির মালিক আরিফ হোসেনসহ ভুক্তভোগীরা দুইটি নন জিআর ও ৩টি সিআর মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানী শেষে রামগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুনের নেতৃত্বে গতকাল উক্ত কৃষি জমির চারপাশের বাঁধ ভেকু মেশিন দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়।
ভুক্তভোগি আবদুল কাদের, আবদুল আজিজ, নুরজাহান বেগম, রেহানা বেগম ও আরিফ হোসেন জানান, ২০১৮ ইং সন থেকে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল প্রভাব বিস্তার করে একটি মহলের ইন্ধনে ও সহযোগিতায় স্থানীয় গ্রামবাসীর মালিকানাধীন কৃষি জমি জবরদখল শুরু করেন। জোরপূর্বক জমির মালিকদের জিম্মি করে জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি বিক্রি অব্যাহত রাখেন। ধীরে ধীরে তিনি উক্ত মাঠের প্রায় ১৬ একর কৃষি জমি দখল করে চারপাশে বিশালাকৃতির বাঁধ নির্মান করে মাছের ঘের, কলা ও লেবুর বাগান সৃজন করেন। এছাড়া উক্ত কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করে স্থানীয় ব্রীকফিল্ডে বিক্রি করে দেন। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে যুবলীগের সাবেক এই নেতার হাত মারধরের শিকার হয়েছেন কয়েকজন জমির মালিক।
জাহিদুল ইসলাম জুয়েল নলচরা গ্রামের রুহুল আমিনের ৪৭ শতক জমি দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদাদাবি মামলায় বর্তমানে জেলা কারাগারে আটক থাকায় এ ঘটনায় তার কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি।
রামগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার জাহিদুল ইসলাম জুয়েলকে নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তিনি আসেননি। একবার আসলেও তিনি দখলকৃত জমির স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের আলোকে সরেজমিনে তদন্ত ও দীর্ঘ শুনানি শেষে গ্রাম পুলিশ, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় তহশিলদারের সহযোগিতায় জমিগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে বাঁধ অপসারনসহ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি), কৃষি কর্মকর্তাসহ জমির প্রকৃত মালিকদের সাথে কথা বলেছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাই অনেক ফসলি জমি ইতোমধ্যে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। জমিগুলো উদ্ধার ও প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে আজ ইউপি সদস্য, তহশিলদারের সহযোগিতায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও চারপাশের বাঁধ অপসারন করা হয়েছে।