গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
নকশী কাঁথা আবহমান বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। গ্রামীণ নারীদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে সেই নকশী কাঁথা শিল্প। এ আয়ের উৎসকে কাজে লাগিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে প্রান্তিক জনপদের নারীরা। গাইবান্ধার মিতু আক্তার ও শেফালী বেগম নামে ২ নারী উদ্যোক্তার চেষ্টায় পলাশবাড়ী উপজেলার নুনিয়াগাড়ি, উদয়সাগর, গৃধারীপুর, আমবাড়ী ও সুইগ্রাম এলাকায় গড়ে উঠেছে নকশী কাঁথা পল্লী।
গ্রামীণ নারীরা সংসারের সব কাজ শেষ করে রঙিন নকশায় স্বপ্ন বোনেন। সেই সুই-সুতায় ভাগ্য বদলে গেছে মিতু-শেফালীর নকশি পল্লীর সহস্রাধিক নারীর। মিতু-শেফালীর নকশি পল্লীর পণ্যগুলো পৌঁছে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। পুরোনো কাপড়ের ওপরে নতুন জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হয় নকশি কাঁথা। যেখানে নানা রঙের সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় গাছ, লতা-পাতা, ফুল, পাখিসহ বিভিন্ন আলপনা। এ ছাড়া ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী কাপড় ও ডিজাইন নিয়েও কাজ করেন তারা। এ ছাড়া বিছানার চাদর, বালিশের কভার, টেবিল ক্লথ, সোফার কুশন, শাড়ি, জামা-ওড়নাতে কাজ করেন।
উপজেলার উদয়সাগর এলাকার শেফালীর বেগমের বাড়িতে অর্ধশত নারী নকশার কাজ করছে। এদের মধ্যে কেউ বারান্দায়, কেউ উঠানে, আবার কেউ গাছতলায় বসে নকশিকাঁথা, শাড়ি, থ্রিপিস ও সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন পোশাকে নকশা আঁকছে। সুই আর রঙিন সুতায় নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছে নান্দনিক সব নকশা। শৈল্পিক ডিজাইনে প্রতিটি নকশিকাঁথা দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। যার প্রতিটি সেলাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগ হয় তাদের সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো। এখানে কাজের বড় সুবিধা হলো, কর্মীরা নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েও নকশিকাঁথার কাজ করতে পারছে। ফলে তাদের প্রাত্যহিক কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। গৃহবধূ থেকে শিক্ষার্থী সবাই নিজেদের মৌলিক কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছে ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
নারী উদ্যোক্তা মিতু আক্তার ও শেফালী বেগম বলেন, জেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে নিজ এলাকার নারীদের প্রশিক্ষিত করে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় বেশি বেশি নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা দরকার, যাতে করে মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে না পড়ে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে বেকারত্ব কমবে, পাশাপাশি নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে।
শারমিন আক্তার বলেন, তাদের সংসারে অভাব ছিল। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাপড়ে নকশার কাজ করছে। ফলে বাড়তি উপার্জন হচ্ছে। প্রত্যেকেই মাসে ৪-৫ হাজার টাকা আয় করছে।
গাইবান্ধা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক আবদুর সবুর বলেন, জেলার অসহায় ও কর্মহীন নারীদের স্বাবলম্বী করতে ১৭ হাজার ৮২০ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কর্মসংস্থানে যুক্ত আছেন ১০ হাজারেরও বেশি নারী। প্রায় দেড় হাজার নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণসহ ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনে যেকোনো কারিগরি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।