ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে যে ২০ শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ, তাতে আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বক্তব্য প্রচারে নিষেধ করা হয়েছে।
দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য দিতে পারবে না বলেও ১২ নম্বর শর্তে বিধিনিষেধ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ১৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই তারেকের বিরুদ্ধে পাঁচ মামলায় সাজার রায় এসেছে।
সাড়ে আট বছর আগে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তারেককে নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। সেই প্রেক্ষাপটে ‘আইনের দৃষ্টিতে পলাতক’ থাকা অবস্থায় তার বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করে হাই কোর্ট।
গত জুলাই মাসে নয়া পল্টনে বিএনপির এক সমাবেশে তারেক রহমানের ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। রিটকারী পক্ষ তখন হাই কোর্টের সেই রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়। এরপর গত ২৮ অগাস্ট হাই কোর্ট এক আদেশে তারেক রহমানের সাম্প্রতিক সব বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়।
এর মধ্যে ঢাকায় দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশের আগে দুই দলকেই দণ্ডিত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচারে কিংবা বক্তব্য দানে নিষেধ করল পুলিশ। এর বাইরে আরও যে ১৯ শর্ত দেওয়া আছে, সেগুলোও দুই দলের জন্য একই।
শর্তগুলো হল-
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশ এর যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. বেলা ১২টার আগে কোনক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না।
৮. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (বেলা ২টা থেকে ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।
১১. সমাবেশ সমাপ্তির পর যাওয়ার সময় রাস্তায় কোথাও কোনো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না।
১২. আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য দিতে পারবে না বা তার কোনো বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।
১৩. রাস্তার বাম লেন ন্যূনতম ব্যবহার করে সমাবেশ করতে হবে এবং অন্য লেনসমূহ কোনক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৫. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৬. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
১৭. সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোন ধরনের লাঠি-সোঁটা বা রড সদৃশ কোনো বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।
১৮. আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কোন বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
১৯. উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২০. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই এ অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
শনিবার বেলা ২টায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরু হবে, যেখান থেকে তাদের আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হওয়ার কথা।
এর পাল্টায় শন্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বেলা আড়াইটায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে তাদের সমাবেশের সময় দেওয়া হলেও নেতাকর্মীদের বেলা ১১টা থেকেই জমায়েত হতে বলা হয়েছে।