মোঃ আব্দুস সালাম , চিরিরবন্দর ( দিনাজপুর ) প্রতিনিধি :
“ঘন শিশির মাখা মেঠো ঘাসের পথে, হাজার বছর ধরে শীত কন্যা নাইওরির বেশে আসে এ দেশে, আসবে গ্রাম-বাংলার জনপদে”। সকালে ঘাসের ডগার শিশির বিন্দু ও উত্তরের হিমেল হাওয়ার প্রভাবে শীত জেঁকে বসতে শুরু করছে দেশের উত্তরের প্রকৃতির উপর। সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন ও অনেক বেলা পর্যন্ত পথ-ঘাট নির্জনতা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
সকালের শিশির আর সন্ধ্যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চিরিরবন্দরসহ উত্তরাঞ্চল। ফলে শীত নিবারনে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন চিরিরবন্দরের লোকজন। এতে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোষকের দোকানে। ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষকের কারিগরদের। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে উপজেলায় লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাজারে উন্নত মানের কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা অনেক বেশি। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের গরম কাপড়ের তেমন চাহিদা এখন না থাকলেও তুলার বাজারে শুরু হয়েছে তুলা বেচা কেনা আর লেপ তৈরির ধুম। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা যেন সময় নেই ।
ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকমের তুলা দিয়ে তৈরি করছেন ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের লেপ- তোশক। লেপ- তোশক তৈরির কারিগররা বলছেন শীতের তীব্রতা শুরু হলে লেপ তৈরির ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।তবে প্রতিটি দোকানিরা বলছেন, শীতের বেচা-কেনা এখনো শুরু হয়নি। আরো কিছু দিন পর জমে উঠবে শীতের কাপড়ের কেনাবেচা। আমতলী হাটের লেপ তোষক তৈরির কারিগর জানান, বড় আকারের লেপ তৈরির মজুরী চার’শ টাকা আর মাঝারি আকারের লেপ তৈরির মজুরী তিন’শ টাকা।
প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তুলা,কাপড়,কভার এবং মজুরীসহ একটি বড় লেপ তৈরিতে মোট খরচ পড়ে প্রায় ২ হাজার ৫ শত টাকা। আর মাঝারী আকারের লেপে মোট খরচ পড়ে ১ হাজার ৭’শ টাকা। এখন তারা সারাদিনে ৪/৫টি লেপ তৈরি করেন। তুলা ব্যবসায়ীরা বলেন,ভালো মানের তুলা ২’শ টাকার বেশি প্রতি কেজি। আর গার্মেন্টেস এর বিভিন্ন রকমের তুলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি। একজন কারিগর করে বলেন,ছোট থেকে এ পেশার সাথে যুক্ত আছি। আগে এ আয় দিয়ে ভালোই সংসার চলছিল কিন্তু এখন ভালো যায় না।
তিনি আরও বলেন, ১টি বড় লেপ তৈরি করতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি তুলা ব্যবহার করলেও আমাদের পারিশ্রমিক বাড়ে না। বড় আকারের লেপের জন্য ৬-৮ কেজি তুলার প্রয়োজন হয়। আর মাঝারী আকারের লেপে ৫-৬ কেজি তুলা লাগে। বড় আকারের লেপে ১০ গজ লাল কাপড়ের প্রয়োজন হয়। আর বেশিরভাগ লেপ লাল কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। লেপ তৈরি করতে আসা এক নারী বলেন, কিছু দিন আগে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। জামাই বাড়িতে নতুন লেপ দিতে হবে তাই শীত শুরুর আগেই পছন্দমত লেপ তৈরি করে নিচ্ছি। তুলা ব্যবসায়ীরা বলেন,এখন শীতের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। শীতের প্রভাব এখনো তেমন পড়েনি। তবে শীতের পূর্ব প্রস্তুতির জন্য লোকজন আগাম লেপ তৈরি করছেন। আরো কয়েকদিন পর কাজ বেশি হবে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, শীতের শুরু থেকে অন্তত ৩ মাস লেপ-তোষক বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে লেপ। যে কারণে চাহিদার কথা মাথায় রেখে লেপ-তোষকে সেলাইকর্মীদের সংখ্যাও বাড়াতে হয়।
উপজেলার লেপ-তোষক ব্যবসায়ীরা আরো জানান, করোনা পরিস্থিতির কারগত বছর শীতে তেমন ব্যবসা হয়নি। তাই শীত মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরি করে দোকানে মজুত করে রাখা হচ্ছে।