দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট নামে অ্যাপ উদ্বোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার রাজধানীর আগারগাওঁয়ের নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান ও ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার এ পদ্ধতি চালু করতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে সফটওয়্যারের পেছনে ৯ কোটি ১১ লাখ এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
তাদের ধারনা, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকার কারণে প্রার্থীরাও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন হবেন। সর্বোপরি ভোটার, প্রার্থী, জনগণ এ তিনের আস্থা/বিশ্বাস অর্জনে একধাপ এগিয়ে থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার দিকে অগ্রগামী হবে। আর সার্বিক বিষয়াবলী নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে সহজ করবে এ অ্যাপ।
এসময় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, মনোনয়ন দাখিল করতে আসার সময় লোক বেশি হওয়াতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবার ভয় থাকতো। এখন আর সেটা হবে না। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সব কিছু স্বচ্ছভাবে করার চেষ্টা করে আসছি। এটাতে কমিশন অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হলো।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, প্রার্থীর তথ্য নিয়ে অনেক সময় অপপ্রচার থাকে। সেটা এখন জনগণ জানতে পারবে। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে যে সন্দেহ থাকে তাও দূর হবে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রার্থীদের কাছে ও রিটার্নিং অফিসারদের আহবান, আপনারা এই অ্যাপটা ব্যবহার করেন।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, প্রার্থীদের সব তথ্য এই অ্যাপে থাকার ফলে জনগণ যোগ্য প্রার্থী কারা সেটা জানতে পারবে।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, এটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য করা হয়েছে। পরে স্থানীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যও করা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এই পদ্ধতি তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য সহায়ক হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনবে বলে মনে করি। কারণ ভোট কেন্দ্রের সব খবর প্রার্থীদের তথ্য এখানে থাকবে। আমাদের নমিনেশন দাখিল করতে গেলে যে শোডাউন বা সহিংসতা হয় এই অনাচারগুলো অনলাইনের মাধ্যমে কমে আসবে। নির্বাচন ব্যবস্থাটা আরোও স্বচ্ছ হবে। সবাইকে অনুরোধ করবো বিশেষ করে দলগুলো এটা গ্রহণ করে ব্যবহার করবেন।
কী থাকছে ইসির অ্যাপে
এ অ্যাপসের মাধ্যমে বিভাগওয়ারী আসনগুলোর তথ্য, যেমন-মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য (হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) জানা যাবে।
এছাড়া, অ্যাপসটির মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলী ‘নোটিশ’ আকারে প্রদর্শিত হবে। অ্যাপসটির সাহায্যে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর চলমান ভোটিং কার্যক্রমের তথ্য জানা যাবে।
নির্বাচনী ফলাফলের সার্বিক অবস্থাসহ (‘গণনা চলে…’ ইত্যাদি) ‘ফলাফল বিশ্লেষণ’ নামক অপশনের মাধ্যমে একজন ভোটার পূর্বতন নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচনের ফলাফলের গ্রাফিক্যাল বর্ণনা পাবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় যে ধরনের পরিবর্তন আনবে
ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের নাম ও ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে পূর্ব ধারণা নিশ্চিতভাবে ভোটার সময়ের অপচয়, বিড়ম্বনা এবং কিছুক্ষেত্রে, ‘হয়রানি’ হতে রক্ষা করবে।
ভোটার নম্বর জানা থাকার কারণে ভোটার তালিকায় সিরিয়াল নম্বর সহজে নির্ণয় হবে, এ জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাম্পেইনের শরণাপন্ন হতে হবে না।
নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য সম্পর্কে সহজে অবহিত হওয়া, তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ, সমসাময়িক ফলাফলের পাশাপাশি নির্বাচনী ফলাফল জ্ঞাত হওয়ার মতো বিষয়গুলো ভোটারদের উদ্দীপ্ত করবে।
অ্যাপসের মাধ্যমে একজন ভোটার প্রার্থীদের তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করে পছন্দসই প্রার্থী বেছে নিতে পারেন।
ভোটার তার নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার সংখ্যা জানতে পারবেন, যাতে করে চূড়ান্ত ফলাফলে ভোটসংখ্যা সংক্রান্ত কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ থাকবে না।