মো: ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:
প্রতিদিনই হুটহাট করে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। অবশ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য নতুন কোনো খবর নয়। বরং বছরজুড়েই নিত্যপন্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে পণ্যের মূল্য। ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। এ নিয়ে ক্রেতাসাধারণের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না।
সারাদেশের মত রামগঞ্জে মাছ, মাংস, চাল, ডাল, সবজি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা। কারওই হিসাব মিলছে না আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের। অনেকেই বলছেন- আয় বাড়ছে না, ব্যয় সামলাবো কীভাবে? যারা ব্যবসায়ী তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যারা কিনছে তাদের আয়ের বাড়তি উৎস নেই। সবজি বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ৬০-৮০ টাকার কমে কোন সবজি মিলছে না। অপরদিকে মাছের বাজারও চড়া। এদিকে কাঁচা মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম এখনো উর্দ্ধমুখী। অবশ্য সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমানোর ঘোষনা দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। নিত্যপণ্যের অস্বাভাকি দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাজারে লাগামহীন দামে শুধু দরিদ্র নয় মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ-মধ্যবিত্তদের অবস্থান নাভিশ্বাস হয়ে গিয়েছে। যাদের পক্ষে অধিক মূল্য দিয়ে পণ্য কেনা খুবই কষ্টসাধ্য। মাসের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালাতে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। দরিদ্র মানুষের দুবেলার খাবার মোটা চালের দাম পৌঁছেছে কেজিতে ৫০ টাকায়। চালের সঙ্গে বাজারে অন্যান্য জিনিসের দাম সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর-নি¤œ আয়ের মানুষজন। কোনোভাবে আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছেন না তারা। নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। আর সেই আগুনে পুড়ছেন সাধারণ মানুষ।
গতকাল রামগঞ্জ কাঁচা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনও সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি এখনো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। লম্বা বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০, পেঁপে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০-৯০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৫০ কেজি, লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা পিস। পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ৯৫ থেকে ১০০ বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। রসুনেও রয়েছে হতাশার খবর। দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, আলু ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ মাছের দামই চড়া। এক কেজি বা ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, রুই মাছ ৩৫০-৪৫০, কাতল মাছ ৪০০-৫০০, চিংড়ি মাছ ৯০০, কাঁচকি মাছ ৫০০, টেংরা মাছ ৮০০, কৈ মাছ ২৫০, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬৫০, বেলে মাছ ৯০০-১০০০ টাকা, কাজলী মাছ ১৪০০ টাকা কেজি। গরুর গোশত ৯০০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসি ১২০০ টাকা, ব্রয়লার ১৬০-১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমানোর পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৯ টাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আগের দাম ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে কমেছে ৫ টাকা। খোলা সয়াবিন ১৫৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৪৩ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭৫ টাকা, দাম না কমায় তা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯১০ টাকায়।
দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন দিনমজুরের সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কখনো ৫০০ টাকা। আবার কখনো একটু বেশি। তবে প্রতিদিন কাজ নেই তাদের। মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয়। এই টাকায় সংসার চালাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় তাদেরকে। কথা হলে তারা আরো বলেন, খাবারের দাম বাড়ে। শ্রমিকের দাম তো বাড়ছে না। আগের চেয়ে আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। বাজারে যেতে এখন ভয় করে। এমন পরিস্থিতির শিকার শুধু দিনমজুর কিংবা বেসরকারি চাকরিজীবীরাই নন। অনেকের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি নেই। ফলে স্বাভাবিক জীবন চক্রে ব্যাঘাত অব্যাহত রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বেশি। চাল কিনলে, তেল কিনতে পারছি না। মাছ-মাংস তো আমাদের কাছে কেবলই স্বপ্ন। দিন দিন ব্যয়ের গতি বাড়ছে। কোনো উপায় না পেয়ে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছি। আগে যেখানে ২ কেজি কিনতাম, এখন ১ কেজি কিনছি। কম খেয়ে কম বাজার করে সমন্বয় করছি। মাস শেষে কোনো সঞ্চয় নেই। বিপদে পড়লে যে খরচ করবো, সেই সুযোগও নেই।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শারমিন ইসলাম বলেন, অলরেডি মোবাইল কোট চলতেছে। জনস্বার্থে এ অভিজান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।