নাজমুল হাসান নিরব,ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক এর প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.কে. আজাদ।
শুক্রবার ( ৮ নভেম্বর) শামীম হকের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে এ.কে. আজাদ এ আবেদন করেছেন। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের নির্বাচন কমিশনের ৭ নম্বর বুথে (ফরিদপুর অঞ্চলে) এ আপিল আবেদন জমা দেন তিনি।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর শামীম হকের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করেছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। একই সঙ্গে শামীম হকের মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুক হোসেনও।
অন্যদিকে একই সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিক হওয়ার অভিযোগ এনে মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। উভয়ের মনোনয়ন যাচাই-বাচাই শেষে দুই প্রার্থীকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দুজনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.কে. আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেটি মোটেও সত্য নয়। আমি বাংলাদেশের নাগরিক। অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই আমার। আমি কোনোদিন অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদনও করিনি। আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট হোল্ডার। বিদেশের কোনো ব্যাংকে আমার অ্যাকাউন্টও নেই।
শামীম হকের বিরুদ্ধে এ কে আজাদের আপিল অভিযোগে বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সংসদীয় ২১৩ ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হক মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, যিনি একজন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিক, যাহা বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ‘গ’ ধারা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এই ধারায় শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলা হয়, উক্ত প্রার্থীর দ্বৈত নাগরিকত্ব ত্যাগের প্রমানপত্র দেখাতে না পারলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার বিনীত অনুরোধ করছি। চিঠির একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবরও পাঠানো হয়েছে।
শামীম হক নেদারল্যান্ডে থাকার সময় দীর্ঘদিন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এই পদে থাকতে হলে যেকোনো ব্যক্তিকে ওই দেশের নাগরিক হতে হয়। প্রবাস রাজনীতিতে দলীয় পদ পদবি পেতে হলে স্ব-স্ব দেশের ভোটার ও বৈধ নাগরিক হতে হয়।
অভিযোগ করা হয়, শামীম হক একই সাথে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি ডাচ পাসপোর্টধারী ও ভোটার।
এ ব্যাপারে শামীম হক বলেন, আমি নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ছিলাম। কিছুদিন আগে সারেন্ডার করেছি। যাবতীয় কাগজপত্র আমার কাছে আছে। এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক আমি।
তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচন করার সুযোগ নেই বিষয়টি আমি জানতাম। এ কারণে আগে থেকেই নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছি। নির্বাচন কমিশন চাইলে আমি আমার কাগজপত্র দাখিল করব।
নির্বাচনে অংশ নিতে আসনটি থেকে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন মোট আটজন প্রার্থী। যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচজনের মনোনয়ন বৈধ এবং এক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তিন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।
আসনটিতে রিটার্নি কর্মকর্তা কর্তৃক ঘোষিত বৈধ প্রার্থিরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত এম এ মুঈদ হোসেন আরিফ, জাতীয় পার্টির এস এম ইয়াহিয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. দেলোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া ছাড়াও বয়স ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। এ ছাড়া অপ্রকৃতিস্থ, দেউলিয়া কিংবা দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রার্থীর অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। ৬৬ ধারায় আরও উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে ও পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে; কিংবা অন্য ক্ষেত্রে পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তিনি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন বলে গণ্য হবে না।