নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জয় মানেই বড় অর্জন। ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে দীর্ঘ দিনের সেই আক্ষেপ মোচন করেছিল বাংলাদেশ। এবার সিরিজ জিতে ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে ছিল টাইগাররা। ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুরে চতুর্থ দিনে টেস্ট সিরিজ জয়ের দৃশ্যপটও তৈরি করেছিল শান্ত বাহিনী।
গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
১৩৭ রানের মামুলি পুঁজি দাঁড় করিয়েও কিউইদের চেপে ধরেছিল টাইগার স্পিনাররা। ৬৯ রানে ৬ উইকেট শিকার করে জয়ের আশাও জাগিয়ে চা-বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সপ্তম উইকেটে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনারের জুটিতে শেষ পর্যন্ত হেসেখেলে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে কিউইরা। এতে ১-১ সমতায় শেষ হলো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজটি।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৭২ রানে অল-আউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ঘূর্ণিতে ৫ উইকেট ৫৫ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টি বাধায় দ্বিতীয় দিনের খেলা মাঠে না গড়ালে বাংলাদেশের চেয়ে ১১৭ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করে সফরকারীরা। এরপর ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া কিউইরা গ্লেন ফিলিপসের ঝোড়ো ব্যাটিং শেষে তৃতীয় দিনে ৮ রানের লিড নিয়ে অল-আউট হয়। প্রথম ইনিংসে ৩৭ দশমিক ১ ওভারে ১৮০ রানে থামে ব্ল্যাক-ক্যাপসরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ৩৮ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। এ সময়ে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ৩০ রানে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। ওপেনার জাকির হাসান ১৬ ও মমিনুল শূন্যতে অপরাজিত ছিলেন। নিউজিল্যান্ডকে অন্তত ২০০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে চাওয়া বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের শুরুটা ভালোই করেছিল। তবে দলীয় ৭১ রানে মুমিনুল হক বিদায় নিলে খেই হারানোর শুরু। চতুর্থ দিনের শুরুতে ব্যক্তিগত ১০ রানে আউট হন মুমিনুল।
জাকিরের একার লড়াইয়ের দিনে একে একে সাজঘরের পথের দিকে মিছিলে যোগ দেন অন্য ব্যাটাররা। সাবেক অধিনায়কের দেখানো পথে হেঁটে এরপর মুশফিকুর রহিম ৯, শাহাদাত হোসেন ৪, মেহেদি হাসান মিরাজ ৩, নুরুল হাসান শূন্য, নাঈম হাসান ৯, জাকির ৫৯ ও শরিফুল ইসলাম ৮ রানে আউট হন। ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল।
একা লড়াই করে চাপের মুখেই ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেন ওপেনার জাকির। নবম ব্যাটার হিসেবে প্যাভিলিয়নের পথ ধরার আগে ৮৬ বলের মোকাবিলায় ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫৯ রান করেন জাকির। শেষ পর্যন্ত ৩৫ ওভারে ১৪৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
কিউইদের হয়ে এজাজ প্যাটেল ছয়টি, মিচেল স্যান্টনার তিনটি ও টিম সাউদি একটি উইকেট শিকার করেন।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগারদের স্পিন ভেলকিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাক-ক্যাপসদের ইনিংসের শুরু থেকেই চেপে ধরেন তাইজুল-মিরাজরা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে আঘাত হানেন শরিফুল। শরিফুলের পেসে পরাস্ত হয়ে লেগ-বিফোরের ফাঁদে পড়ে মাত্র ২ রানে ফেরেন কনওয়ে।
এরপর ব্যাট করতে নেমে তাইজুলের বাড়তি সুইংয়ের ফাঁদে পড়েন উইলিয়ামসন। স্ট্যাম্পিংয়ে পরাস্ত হন উইকেটরক্ষক সোহানের কাছে।
মিরাজের স্পিনে ফেরেন হেনরি নিকোলস। অন্যপ্রান্তে থিতু হতে থাকা টম ল্যাথামকে শান্তর ক্যাচ বানিয়েছেন মিরাজ।
একই রকমভাবে টম ব্লান্ডেলকে নাস্তানাবুদ করেছেন তাইজুল। এরপর কিউই শিবিরে তাইজুলই সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছেন। ফর্মে থাকা ড্যারিল মিচেলকে শান্তর ক্যাচে পরিণত করেছেন তিনি।
চা বিরতির আগে ষষ্ঠ উইকেটও হারিয়ে ফেলে কিউইরা। তবে কিউইদের জয়ের আশা জাগিয়ে রাখেন গ্লেন ফিলিপস। সপ্তম উইকেটে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনার ২১ রানের জুটি গড়ে চা বিরতিতে মাঠ ছাড়েন।
তৃতীয় সেশনে কিউইদের জয়ের বন্দরে নিয়ে যান এই দুই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৩৯ দশমিক ৪ ওভারে ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়সূচক রান পেয়ে যায় কিউইরা। ফিলিপস ৪৮ বলে ৪০ ও স্যান্টনার ৩৯ বলে ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ তিনটি, তাইজুল ইসলাম দুটি ও শরিফুল ইসলাম একটি উইকেট শিকার করেন।