নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের ইতালী প্রবাসী নিজাম শেখ এর অসহায় পরিবারের স্থানীয় প্রভাবশালীদের অত্যাচারে বাড়িঘর ছাড়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের চাষাবাদের জমিও চাষ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ইতালী প্রবাসীর স্ত্রী নুপুর বেগম।
সোমবার (১০ ডিসেম্বর) স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা। নিজাম শেখ প্রবাসে থাকায় পরিবারের সদস্যদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
প্রবাসী নিজাম শেখের স্ত্রী নুপুর বেগম জানান, আমার স্বামী বিগত ৫ বছর ইতালীতে থাকেন, আমাদের প্রতিবেশী ও আত্মীয় একই গ্রামের আয়জদ্দিন ওরফে আয়ুব মোল্লার নাতি, মিরাজ মোল্লার ছেলে মনির মোল্লা (২২)। খৈলশপট্টি গ্রামের কামরুজ্জামান মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লা (২৫), তুগোলদিয়া গ্রামের মৃত্যু ইছহাক মোল্লার ছেলে মোশারফ মোল্লা (৩৬) আমার স্বামীর ভাতিজা ভাসুর রেজাউল শেখ এর ছেলে, ২০২১ সালে দেশীয় দালালের মাধ্যমে কাজের তাগিদে রোমানিয়া যায়। সেখানে গিয়ে তারা উন্নত জীবনের আশায় অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার পথ খোঁজে। তারা আমার স্বামী ইতালী প্রবাসী নিজাম শেখ এর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি মাধ্যম ধরিয়ে দেন, যিনি মাধ্যম তিনি ওই চারজনের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা করে মোট ১৬ লক্ষ টাকা নেন ইতালী পৌছে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু আমার ভাসুরের ছেলে যেতে পারলেও পুলিশে ধরা খায় বাকি তিনজন। পরে তারা বিদেশে জেল খেটে দেশে ফেরত চলে আসে।
দেশে এসে তারা বিভিন্ন ভাবে আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করে। মানবপাচার আইনে তারা মামলা দেয় আমাদের নামে, সব মামলা খারিজ হয়ে যায়। তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা তাদের টাকা ফেরৎ দেই। কিন্তু টাকা ফেরৎ নেয় না মিরাজ মোল্লা ও তার ছেলে মনির মোল্লা। তাদের দাবি রোমানিয়া যাওয়া সহ তাদের সব ধরনের ক্ষতিপূরনসহ ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। এই টাকা না দেওয়াতে প্রতিনিয়ত চলে আমাদের সাথে ঝামেলা। বিভিন্ন সময় বাড়ির উপর এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ, মাঠের জমি চাষাবাদে বাধাঁসহ নানাবিদ সমস্যার সৃষ্টি করে চলে। এই অবস্থায় এখানে আমাদের বসবাস করা দূরহ হয়ে পড়েছে।
নিজাম শেখ মা ফুলমতি বেগম (৭২) জানান, আয়জদ্দিন মোল্লা আমাদের প্রতিবেশী ও এলাকার প্রভাবশালী তাই তাদের অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। সব সময় ভয়ে ভয়ে দিন পার হয় আমাদের, রাতের আধাঁরে ঘরের চালের উপর ইটপাটকেল পড়ে মাঝ রাতে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ওই রাতে আমরা আর ঘুমাতে পারি না। কখন যেন দলবল নিয়ে বাড়ির উপর এসে হামতাম করে। আমরা এখন আর কি করবো।
নিজাম শেখ এর বড় ভাই রেজাউল শেখ বলেন, আমি এই সবের কিছুই জানি না তারপরও আমার নামে মানব পাচার আইনে মামলা দেয়। আমি আমাদের পুরান বাড়িতে থাকি। আমার ভাই নিজাম শেখের স্ত্রী ও আমার মা সহ ছোট বাচ্চারা অনিরাপদে দিন পার করে। আয়জদ্দিন মোল্লা ও তার ছেলেরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি তাই প্রতিবাদ করতে পারি না। তাই তারা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে । উপায়ন্তোর না পেয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। থানায় অভিযোগ করাতে তারা আমাদের উপর আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। আমরা এর একটা সুষ্ঠ সুরাহা চাই।
এদিকে আয়জদ্দিন ওরফে আয়ুব মোল্লা অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আমরা তাদের সাথে কোন খারাপ আচারণ করছি না। তারা যে অভিযোগ আনছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা আমাদের পাওনা টাকাটাই শুধু চাইছি। তিনি বলেন, আমার নাতি ও ছেলে গরীব মানুষ জমিজমা বন্ধক রেখে টাকা পয়সা সুদে করে তাদের দিয়েছে। তাহলে আমাদের এতোবড় ক্ষতি হল আমাদের এই ক্ষতি পূরন কে দিবে। ৪ লক্ষ টাকা আমাদের দিয়েছিলো আমরা ওই টাকা নেইনি। আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই, আর নিজাম এর ভাতিজা যেতে পারলো আর বাকী কেউ যেতে পারেনি এটা ও ইচ্ছা করে করেছে। তাই আমাদের সব টাকা দিতে হবে।
সালথা থানার এস আই সংস্লিষ্ট ইউনিয়ন বিট অফিসার সুমন বলেন, ইতালী প্রবাসী নিজাম শেখ স্ত্রী নুপুর বেগম একটি অভিযোগ করেছেন। আমরা দুপক্ষকে ডেকে শান্ত থাকতে বলেছি। জমি চাষাবাদে কোন বাধা নেই। টাকা পয়সা লেনদেন এর বিষয় সাক্ষ্যপ্রমানে পরবর্তীতে উভয় পক্ষ বসে সমাধান করা হবে।