মোঃ ফিরোজ ফরাজী , রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
সময় যত পেড়িয়ে যাচ্ছে, ততই স্বজনদের ফিরে আসার আশা ছেড়ে দিচ্ছে পরিবার। কিন্তু তবুও কেউ কেউ প্রিয়জনের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় রয়েছেন। তাদের আশা হয়তো ফিরে আসবেন স্বজন। প্রায় এক মাসে মিধিলির ঝড়ে হয়ে গেলেও নিখোজ হওয়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ২৫ জেলের এখনো সন্ধান মেলেনি।
জিসান প্যাদা বাড়ী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। সে ওই এলাকার ঝিলাম প্যাদার ছেলে। পাশের গ্রাম কাউখালীর হাসান জোমাদ্দারের মালিকানাধীন ট্রলারের মাল্লা হিসেবে সাগরে মাছ শিকারে যান। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র পরে ওই ট্রলারটি নিখোঁজ হয়। এরপর আর ওই ট্রলারের কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
ফলে সময় যতই পেড়িয়ে যাচ্ছে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে। জানা গেছে, জিসানের সঙ্গে তার আরও দুই খালতো ভাই তামিমও কামরুল জেলে হিসেবে ছিল ওই ট্রলারে। তাদেরও সন্ধান মেলেনি। কোথায় আছে, কেমন আছে, তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানে না কেউই।
জিসান-তামিম ও কামরুলের পরিবারের মতই স্বজন ফিরে আসার প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে আরও ২২ পরিবার। এখন সময় যতই গড়াচ্ছে, তাদের উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে। নিখোঁজ হওয়া জেলেদের বাড়িতে বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রায় এক মাস পার হলেও কারো কোন সন্ধান মেলেনি। এখন নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি পরিবারের।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের বাসিন্দা হাসান জোমাদ্দারের ট্রলারের ৮ জন, মৌডুবী ইউনিয়নের কাজিকান্দা দিদার মৃধার ট্রলারের ৮ জন ও একই এলাকার হিমু হাওলাদারের মালিকানাধীন ট্রলারের ৯ জন জেলে নিখোঁজ হয়।
এদিকে কাউখালী গ্রামের ট্রলার মালিক হাসান জোমাদ্দার বলেন, গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করার উদ্দেশ্য ট্রলার ছেড়ে যায়। কিন্তু পরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র পর আর তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করা যায়নি। তারা কোথায় আছে, কীভাবে আছে, কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনো। কয়েকদিন আগেও আমরা ওইসব পরিবারের সাথে নিয়ে সুন্দরবন ও আশপাশের কয়েকটি দ্বীপে খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলাম এমনকি বাংলাদেশ ভারত সিমান্তের কাছাকাছি গিয়েও খোঁজার চেষ্টা করছি। আমি নিখোজের পরপরই অনলাইনে জিডি(সাধারণ ডায়েরী) করেছি।
সাগরে নিখোঁজ হওয়া উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের সাজির হাওলা গ্রামের বাসিন্দা রবিউলের চাচা বেলাল মাতুব্বার বলেন, আমরা ট্রলার মালিক হাসান জোমাদ্দারসহ ট্রলার নিয়ে সুন্দরবন এলাকায় খোঁজ নিয়েও কোন সন্ধান পাইনি।
উপজেলার কোড়ালিয়া মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি জহির হাওলাদার জানান, ‘আমরা সব জায়গায় খোঁজ খবর রাখছি। প্রশাসন সাথে যোগাযোগ রাখছি। নিখোঁজ হওয়া ট্রলার আর জেলেদের যদি একটু সন্ধান পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোন জেলে বা ট্রলারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে, ঝড়ে আঘাতে ট্রলারগুলো সুন্দরবন এলাকার ভারতে দিকেও যেতে পারে।’
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘর্ণিঝড় মিধিলিতে হারিয়ে যাওয়া নিখোঁজ ২৫ জেলেও তিনটি ট্রলারের এখনো কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি, তবে পরিবারের কেউ কেউ বলছে হয়তো ভারতে চলে গেছে। তবে আমাদের চ্যানেল থেকে এখনো কোন মেসেজ পায়নি। নিখোঁজ জেলেদের তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।