আনোয়ার হোছাইন ঈদগাঁও,কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ফসলি জমির টপসয়েল গিলে খাচ্ছে অনুমোদনহীন অর্ধডজন ইটভাটা।এতে করে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেনা হাজারো কৃষক। অপরদিকে
ফসল কাটার সময়ও শেষ হতে চলছে। তবুও শুরু করতে পারছেনা পাকা ধান কাটা।
উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ,ইসলামাবাদ,পোকখালী ও ইসলামপুরের হাজারো একর ফসিল জমির পাকা ধান কাটার সময় শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু শীত মৌসুম শুরু হতেই কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলার আগেই মাটি খেকো চক্র অবৈধ এসব ইটভাটা মালিকদের সাথে মোটা অংকের দেনদরবারে ফসলি জমির টপসয়েল লুটে ফসলি জমিতে অর্ধশতাধিক অবৈধ ডাম্পার ও স্কেভেটর নিয়ে নেমে পড়ে। অপরদিকে বিগত বন্যার কারণে হাজারো হেক্টর জমিতে দেরিতে ফসল রোপন শুরু হওয়ায় চাষকৃত আমন ধান এখনো পাকেনি।
কৃষকরা জানান, বন্যায় জলাবদ্ধতার কারনে গত ভাদ্র আশ্বিন মাসে আমন ধান রোপন করতে প্রায় দেড় মাস বিলম্ব হয়েছে। তাই ধান পাকার সময়ও পিছিয়ে । গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষায় এরকম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বিলজুড়ে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। ভূমি মালিক, কৃষক ও বর্গা চাষীরা বলছেন, গত প্রায় দুই দশক ধরে একটি চক্র ক্রমাগত টপ সয়েল লুট করাতে প্রতি বছর জমি নীচু হয়ে যাওয়াতে জমির ফসলি অংশ প্রায় পুকুরের মত গভীর হয়ে গেছে। তাই বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে জমিজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
ভূমি মালিক হামিদ বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় ফসলি জমি ধনকা বিলের দক্ষিণ পাশে পানি নিস্কাশনের খাল আছে। কিন্তু এখন খালের চেয়ে জমি অন্ততঃ গড়ে পাঁচ-ছয় ফুট নীচু হয়ে গেছে। ফলে ঐ খাল দিয়ে আর পানি নিস্কাশন হয়না। তাই জলাবদ্ধতা এখন বিলের নিত্যসঙ্গী। ফলে আমন ধান রোপন, উৎপাদন ও সংগ্রহ পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর।
এলাকাবাসী জানান, প্রতি বছর আমন ধান কাটা শেষে পৌষ-মাঘ মাসে শুরু হতেই ফসলী জমির ওপরের অংশ (টপ সয়েল) কাটার প্রতিযোগিতা চলে রাতদিন ।
কৃষক জাফর জানান, উপজেলার ফসলি জমি গুলোতে ডজন ডজন শক্তিশালী এক্সেভেটর (ভেকু) নামিয়ে রাতদিন টপ সয়েল কাটা শুরু করে কয়েকটি সিন্ডিকেট। শতাধিক ডাম্পার যোগে এসব মাটি বিভিন্ন ইট ভাটায় সরবরাহ করা হয়। এভাবে আবার রবি ধান রোপন পর্যন্ত দেড় দুই মাস দরে চলে ভয়াবহ এ টপ সয়েল কাটা।এসব মাটি ভর্তি অবৈধ ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচলে প্রতি মৌসুমে সরকারি গ্রামীণ রাস্তা নষ্ট হয় এবং অকালে মৃত্যু ঘটে অনেক পথচারীর
স্হানীয়রা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্ততঃ অর্ধডজনের অধিক ইট ভাটা রয়েছে।এসব অনুমোদনহীন ভাটা মালিকরা পরিবেশ, বনবিভাগসহ উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দিব্যি পরিবেশ ও জনবিধ্বংসি এ অপকর্ম অব্যাহত রাখে।
এর ফলে জমির দো ফসলী উর্বর জমিগুলো নীচু হতে হতে এখন কোমর সমান গভীরতার কারণে জলাভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
এলাকার সচেতন মহল বলেন, এভাবে টপ সয়েল কাটা বন্ধ না হলে উপজেলার ফসলি জমিগুলি বিরান হয়েপরিত্যক্ত জলাভূমিতে পরিণত হতে বেশী দেরী লাগবেনা৷ এমনটি হলে এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, ফসলী জমি থেকে কেউ টপ সয়েল কাটলে আইনগত ব্যাবস্হা নেয়া হবে।