মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ
পতাকার বর্ণিল ভালোবাসায় শিহরিত হয়ে উঠে সবকিছু। শুধু জাতীয় পতাকা নয়, পোশাক পরিচ্ছেদেও দেখা যায় লাল সবুজের ছোঁয়া। আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক লাল সবুজে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে পুরো জাতি। এ পতাকা আমাদের শেখায় দেশ ও জনগনের পক্ষে কথা বলার। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের পরিচিত করে স্বাধীন সার্বভৌম ও অকুতোভয় জাতি হিসেবে তোলে ধরার ও সাহস যোগায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।
‘লাল-সবুজের পতাকা আমাদের মনে করে দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। লাল সবুজের পতাকা আমাদের অহংকার। ছোটদের হাতে পতাকা তুলে দিলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের জানার আগ্রহ বাড়বে।’ সেই অপেক্ষায় পুরো দেশবাসী। সারা দেশজুড়ে উড়বে জাতীয় পতাকা। বিজয়ের মাস এলেই লাল-সবুজ ফেরিওয়ালাদের পতাকা বিক্রির ধুম পড়ে। এই সময় ফেরিওয়ালাদের হাতে থাকে বিজয়ের নিশান বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা।
১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। প্রতিবছর বিজয় দিবস বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি বিশেষ দিন। এ দিনটিকে ঘিরে ঐক্যের প্রতীক জাতীয় পতাকা হয়ে ওঠে আবেগের বহিঃপ্রকাশের অনুষঙ্গ। বছর ঘুরে ডিসেম্বর এলে বাঙালির প্রাণে জেগে ওঠে দেশাত্মবোধ। কিশোর-কিশোরীদের পোশাকেও দেখা যায় লাল-সবুজের ছোঁয়া। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তবে বাবার মুখে শুনেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা ও বুদ্ধিজীবীরা সশস্ত্র সংগ্রাম করে এই দেশ স্বাধীন করেছেন।’
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এ পতাকায় জড়িয়ে আছে ১৬ কোটি মানুষের আবেগ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। পতাকা হাতে ফেরিওয়ালাদের পথচলা এক মুগ্ধকর দৃশ্য। বিজয়ের মাসে ফেরিওয়ালারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছে। তাঁদের দেখে পতাকা কিনতে ক্রেতারাও ভিড় করছেন। যার যার চাহিদা অনুযায়ী নিচ্ছেন পতাকা। এ ডিসেম্বরই যে বাঙালির মুক্তি ও বিজয়ের মাস। তাই ডিসেম্বর এলেই লাল-সবুজ পতাকা হাতে দেখা মেলে অসংখ্য শিশু-কিশোর, যুবক-বয়স্কদের। যারা রক্তিম সূর্য কাঁধে বেরিয়ে পড়েন পথে পথে।
রামগঞ্জে গাড়িতে, বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, রিকশায় এমনকি দুই চাকার মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের সামনে দুলছে লাল-সবুজ পতাকা। এই লাল সবুজ দোলার মাঝে আছে এক অন্য সৌন্দর্য, আছে অহংকারের গল্প। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে সামনে রেখে সেই সৌন্দর্য প্রদর্শন করছেন আরমান। বয়স ২৫ বছর। পেশায় ফেরিওয়ালা হলেও বিজয়ের মাসে তার পরিচয় ভিন্ন, বিজয়ের মাসে তিনি লাল-সবুজ পতাকার ফেরিওয়ালা। সারা বছর তিনি নানা রকম পণ্য ফেরি করে বিক্রি করলেও ফেব্রুয়ারী, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে তিনি ফেরি করে পতাকা বিক্রি করে স্বপ্ন বুনছেন।
ফরিদপুর উপজেলার চান্দা গ্রামের মো. মিজান (২৫) এসেছেন পতাকা বিক্রি করতে। সেই জানান, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাস এলেই পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়েন নগরীর পথে-প্রান্তরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন। তার কাছে ১০, ২০, ৩০, ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকা দামের পতাকা রয়েছে। তবে ছোট পতাকাই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পতাকা বিক্রি হয়। প্রতিদিন যা বিক্রি হয়, তা থেকে খরচ বাদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। আরমানের মতো ফয়সালও পতাকা বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, সংসারের অভাবের কারণে পড়ালেখাও করতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা না হলেও যুদ্ধের গল্প শুনেছি অন্যদের মুখে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। ২ লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে এই মুক্তিযুদ্ধে। এত কিছুর বিনিময়ে যে পতাকা সে পতাকা বিক্রি করতে পারাটাও সম্মানের ব্যাপার।
বিক্রি কেমন হয় জানতে চাইলে ফয়সাল জানায়, সকাল ৯টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিনে বিভিন্ন আকারের ১৪ থেকে ১৫টা পতাকা বিক্রি করা যায়। দিনশেষে ৭শ থেকে ৮শ টাকা আয় করা যায়। এসব পতাকা যারা বিক্রি করেন তারা সবাই মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা। সারাবছর অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন দিবস এলেই নেমে পড়েন পতাকা বিক্রিতে। বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রামগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে যায় লাল সবুজের পতাকা। বিশেষ করে ডিসেম্বরের বিজয়ের মাস ও উত্তাল মার্চ মাসের স্বাধীনতা দিবস এলেই বাঙ্গালীর মনেপ্রাণে জেগে উঠে দেশাত্ববোধ। সব ধরনের মানুষই পতাকা কিনেন, আয়ও খারাপ নয়। তবে ডিসেম্বর শেষ হতেই আবার গ্রামে ফিরে যাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সালে আহম্মেদ বলেন, ‘দেশের জন্য নিজের জীবন বাঁজি রেখে এ দেশকে স্বাধীন করেছি। লাল-সবুজের পতাকাই আমাদের মনে করে দেয় বিজয়ের কথা। লাল-সবুজের পতাকা মানুষের মধ্যে বিজয়ের চেতনা জাগিয়ে তুলে।’