হার দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ডুনেডিনে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কিউইদের কাছে ৪৪ রানে হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এই হারে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৩০ ওভারে ২৩৯ রান তুললেও বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২৪৫ রানের। এমন পরিস্থিতি ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নির্ধারিত সময়ে ৯ উইকেটে ২০০ রানে থামে টাইগাররা। এতে ৪৪ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ডুনেডিনে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড উইল ইয়ংয়ের ১০৫ ও অধিনায়ক টম ল্যাথামের ৯২ রানে ভর করে ২৩৯ রান সংগ্রহ করে। ম্যাচ জিততে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২৪৫ রান।
কিউইদের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দীর্ঘদিন পর দলে ঢুকা সৌম্য সরকার রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন। দ্বিতীয় উইকেটে বিজয় ও শান্ত মিলে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। দলীয় ৪৭ রানে শান্ত ১৫ রান করে সোধির বলে বোল্ড হয়ে ফিরলে ভাঙে জুটি।
তৃতীয় উইকেটে বিজয় ও লিটন দাস গড়েন ৩৩ রান। হাফসেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে থাকতে ফিরে যান বিজয়। দলীয় ৯২ রানে লিটন ফিরলে বিপড়ে পড়ে টাইগাররা। লিটনের বিদায়ের ১১ রান পর অভিজ্ঞ মুশফিক ৪ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে হারের শঙ্কা জাগে টাইগারদের।
তবে ৬ষ্ঠ উইকেটে তৌহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাতে থাকেন। এ দুজনে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। দলীয় ১৫৯ রানে ২৭ বলে ৩৩ রান করে সোধির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তৌহিদ হৃদয়। এরপর আফিফ ২৮ বলে ৩৮ রান করে থামলে জয়ের আশা ভেস্তে যায়।
মিরাজ শেষ পর্যন্ত ২১ বল ২৮ রানে অপরাজিত থাকলেও পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমিয়েছে। নির্ধারিত ৩০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু টসের পরপরই ডানেডিনে হানা দেয় বৃষ্টি। তাতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। ফলে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে নেমে আসে ৪৬ ওভারে। বৃষ্টির পর বাংলাদেশকে স্বপ্নের মতো শুরু এনে দেন শরিফুল।
প্রথম ওভারেই কিউই শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। ইনিংসের চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে করেছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। আউট সুইং করে বল বের হয়ে যাওয়ার সময় রাচিন রবীন্দ্রের ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়ে। এতে শূন্য হাতেই ফেরেন তিনি।
এর এক বল পর আবারও উইকেটের দেখা পান শরিফুল। প্রথম ওভারের শেষ বলটি ব্যাক অব লেংথে করেছিলেন এই পেসার। এবারও আউট সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে স্লিপে এনামুল হক বিজয়ের হাতে ধরা পড়েন হেনরি নিকোলস। ২ বল খেলে রানের রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।
এরপর উইল ইয়াং ও টম লাথামের ব্যাটে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে কিউইরা। স্বাগতিকরা যখন ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় তখন ডানেডিনে হানা দেয় বৃষ্টি। ১৪তম ওভারের খেলা চলাকালে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়ার। মিনিট ত্রিশেক পর আবারও শুরু হয় খেলা।
দ্বিতীয় দফা বৃষ্টিতে হারিয়ে যায় আরও ৬ ওভার। ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪০ ওভারে। তবে খেলা বেশিক্ষণ চালিয়ে যাওয় সম্ভব হয়নি। এই দফায় প্রায় ৬ ওভারের মতো খেলার পর ২০তম ওভার চলাকালে ডানেডিনে আবারও বেরসিক বৃষ্টির হানা। তাতে তৃতীয়বারের মতো বন্ধ হয় খেলা।
এবারও প্রায় আধা ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয়। আরো একবার কোপ পড়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্যে। এবার কমানো হয় ১০ ওভার। তিন দফা মিলিয়ে মোট ২০ ওভার কমেছে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৩০ ওভারে।
তৃতীয়বার বৃষ্টি শেষে কিউইরা যখন ব্যাটিংয়ে নামে তখন তাদের ইনিংসের বাকি ছিল প্রায় ১০ ওভার। সেটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটাররা। ইয়াং ও লাথাম রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন! ২৬তম ওভারে লাথামকে বোল্ড করে ১৭১ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। লাথাম ফেরেন ৭৭ বলে ৯২ রান করে।
তবে এরপর চ্যাপম্যানও উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক খেলেছেন। তার ১১ বলে ২০ রানের ক্যামিও ছিল দারুণ কার্যকরী। লাথাম নার্ভাস নাইন্টিতে কাটা পড়লেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন ইয়াং। মাইলফলক ছুঁতে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ৮২ বল। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০৫ রান।
শেষদিকে জ্যাক কার্সন-টম ব্লান্ডেলরা দ্রুতই ফিরেছেন। সৌম্য সরকারের করা ইনিংসের শেষ ওভারে রান আউট হয়েছেন ৩ ব্যাটার। তবে তার আগেই তাদের সংগ্রহ দুইশ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের হয়ে ৬ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার শরিফুল ইসলাম। তাছাড়া ৫ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে এক উইকেট পেয়েছেন মিরাজ।