হুমায়ুন কবির,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি :
আজকের দিনে কোন ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা সময়ের পরিক্রমায় দৃষ্টিভঙ্গি বদলে নারী এখন ঘর কন্যার গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। সংসার সামলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে সমানতালে রেখে চলেছেন সফলতার স্বাক্ষর। সবকিছু পাশ কাটিয়ে আজ নারীরা হয়ে উঠেছেন অদম্য।
প্রায় সমানভাবে পুরুষদের সাথে সবক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে চলছেন। এরই আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মোছাঃ আশা মনি। ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতার পর প্রথম বারের মতো নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে মাঠ কাঁপাচ্ছেন আশা মনি। দেশ স্বাধীনের পর এ আসনে কোন নারী, এমপি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি। নারী হওয়ায় প্রার্থীতার বৈধতা ফিরে পেতেও আশা মনিকে বেগ পোহাতে হয়েছে অনেক। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আশা মনি। গত ৪ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর ভোটার সমর্থনে গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।
পরে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে পান আশা মনি।
গত সোমবার ১৮ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণা শুরু করেন আশা মনি। তিনি রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনারুল ইসলামের মেয়ে।
তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
অবিবাহিত মোছাঃ আশা মনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যানেজমেন্টে অনার্স পড়ছেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ২৭ বছর। এক স্বাক্ষাতকারে কালবেলাকে তিনি জানান, “নারী নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার জন্য শুধু টাকাওয়ালা আর ব্যবসায়ীরাদের স্ত্রী, কন্যা বাদেও দরিদ্র পরিবার থেকেও নারীদের নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। আর তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মানে মানুষের সেবা করাে জন্য। তিনি আরো বলেন, এই আসনে মোট ৪ জন এমপি প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনেই পীরগঞ্জ উপজেলার। তাই রাণীশংকৈল উপজেলার একমাত্র প্রার্থী এবং এলাকার মেয়ে হিসাবে আমি বিপুল সমর্থন পাচ্ছি, ইনশাল্লাহ আগামী ৭ জানুয়ারী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমি জয়লাভ করবো। আশা মনি বলেন, ২০২২ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।
সেখানে সন্তোষজনক ভোট পেয়ে পরাজিত হন। এখন তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার জন্য কি করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে নারীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করবেন। কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়াবেন না। এলাকার উন্নয়নে দিনরাত কাজ করবেন। নিজের বা পরিবারের উন্নয়নের কথা তিনি চিন্তা করবেন না। সব সময় নির্বাচনী এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কথাই চিন্তা করে কাজ করে যাবেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটিতে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের কুলা প্রতীকে খলিলুর রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় এবং ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশা মনি। এ আসনে দুই উপজেলায় দুটি পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৯ জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ জন নারী ভোটার রয়েছেন।