সাদিয়া আফরিন অমিন্তা:
ইতিহাস লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে একটি পাইন কাঠের টুকরোর ওপর মোনা লিসার এই ছবিটি আঁকেন। চিত্রকলার ইতিহাসে এই চিত্রকর্মটির মতো আর কোনোটি এত আলোচিত ও বিখ্যাত হয়নি। এর একমাত্র কারণ মোনা লিসার সেই কৌতূহলোদ্দীপক হাসি, যা পরবর্তীতে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসেন। কয়েক শ বছর ধরে মানুষ কম-বেশি বিশ্বাস করে আসছে দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা ফ্লোরেন্সের তৎকালীন একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট।
তবে ফ্রান্সের একজন গবেষক গত দশ বছর ধরে গবেষণার পর বলছেন, প্রোট্রেটের রহস্যময়ী এই নারী অন্য কেউ ছিলেন। আর এই তত্ত্ব নিয়ে শিল্পী মহলে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
মনে করা হয়, লিওনার্দো ১৫০৩ বা ১৫০৪ সালে ফ্রান্সেসকো দেল গিওকন্ডো নামে এক ধনী ফ্লোরেনটাইন ব্যবসায়ীর অনুরোধে প্রতিকৃতিটি আঁকা শুরু করেছিলেন। সেই ব্যবসায়ী তার স্ত্রী লিসা দেল গেরাদিনির একটি প্রতিকৃতি চেয়েছিলেন। পেইন্টিংটি তার নতুন বাড়ির জন্য এবং তার দ্বিতীয় পুত্র আন্দ্রেয়ার জন্ম উদযাপনের জন্য করতে বলা হয়। তবে, বিশেষজ্ঞ ও স্কলারদের মধ্যে তাদের পরিচয় নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। নামকরণের ক্ষেত্রে সেই সময়ে ইতালিতে, মোনা মানে ম্যাডোনা, এভাবে সব নারীকে সম্বোধন করা হত। এখন যেমন মিসেস সম্বোধন করা হয়। এই মোনা থেকেই নামকরণ মোনালিসা হয়েছে।
লিওনার্দো ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পেইন্টিংটির কাজ চালিয়ে যান। তিনি মারা যাওয়ার সময় এটি অসমাপ্ত ছিল।
লিওনার্দো ছবি আঁকার যেসব কৌশল তৈরি করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল স্ফুমাটো কৌশল, যার অনুবাদ করলে দাড়ায়, ‘লাইন বা সীমানা ছাড়াই ধোঁয়ার পদ্ধতি’। তৎকালীন সময়ে শিল্পীদের জন্য রূপরেখা বা লাইন তৈরি করে আঁকা একটি সাধারণ চর্চা ছিল। সে জায়গায় লিওনার্দো লাইন বা রূপরেখা ব্যবহার করেননি।
মোনালিসার বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় কারণ হল হাসি। লিওনার্দো দৃষ্টিকোণ এবং ছায়ার কাজের মাধ্যমে এমন একটি অনন্য হাসি তৈরি করেন, যা একধরনের অপটিকাল ইলিউশন তৈরি করে। দর্শক যখনই মোনালিসার চোখের দিকে তাকায়, মুখ হাসির মতো দেখায়। কিন্তু যখন দর্শকের দৃষ্টি হাসির উপর স্থির হয়, এটি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। যেন এটি কখনই হাসি ছিল না। আবার হাসির বিভিন্ন ব্যাখ্যাও আছে, কেউ কেউ মনে করে যে, এটি একটি সুখী হাসি। আবার অনেকে বিশ্বাস করে এটি একটি দুঃখের হাসি।
মোনালিসা নিঃসন্দেহে একটি ভালো পেইন্টিং হলেও এর এত জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কোনো একক কারণ নেই। বরং এটি বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ঘটনার সমন্বিত ফসল। যা মোনালিসাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পেইন্টিংয়ে পরিণত করেছে।
তথ্য সূত্র:
১. ব্রিটানিকা
২. সাইন্স এবিসি
৩. বিবিসি নিউজ