কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা প্রতিনিধি :
ভোলা-লক্ষীপুর মজুচৌধুরীহাট নৌ-পথে মেঘনা নদীর বেশ কিছু পয়েন্টে নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে প্রায়ই ফেরি ও লঞ্চ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে এ নৌ-পথে চলাচলকারী ফেরি ও লঞ্চগুলোকে নির্ধারিত সময়ের ৪-৫ ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। শুকনো মৌসুমে মেঘনার পানি কমে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, নাব্যতা সংকটের কারণে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে ফেরি ও লঞ্চ চলে। এরপরও ডুবোচরে আটকে যায় ফেরি-লঞ্চ। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও শ্রমিকদের। পণ্য পরিবহনেও বিঘœ সৃষ্টি হয়।
ফেরী কর্তৃপক্ষ ও লঞ্চ মালিক- শ্রমিক সূত্রে জানাযায়, শুকনো মৌসুমে মেঘনার নদীতে পানি কম থাকলে এসব ডুবোচরে ফেরী বা লঞ্চ আটকে যায়। বার বার চেষ্টা করেও ডুবোচর থেকে ফেরি বা লঞ্চ ছাড়ানো যায় না। একপর্যায়ে চালক তখন ফেরি বা লঞ্চটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ভাটায় নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ডুবোচরে ফেরি বা লঞ্চ আটকা পড়ে। জোয়ারের পানি না আসা পর্যন্ত এখানে থেমে থাকতে হবে।
তারা আরও জানান, শুকনো মৌসুমে এলেই মেঘনার ভোলা-মজুচৌধুরীরহাট– নৌ-পথের ৭-৮ পয়েন্টে ভাটার সময় পানি কমে যায়। এতে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হয়। আর ডুবোচরে ফেরি একবার আটকা পড়লে ৪-৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। এত ১ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় প্রায় ৪-৫ ঘন্টা।
তারা অভিযোগ করেন, যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগের দিকটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছে না। মেঘনার ওই পয়েন্টগুলো ড্রেজিং করা হলে এ সমস্যা থাকতো না বলেও মতামত দেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলা-লক্ষীপুর নৌ-পথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য ২০০৬ সালের এপ্রিলে ৩টি ফেরি নিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাট চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ লঞ্চঘাটে আরও দুইটি ফেরি সংযোজন করা হয়। বর্তমানে ভোলা-লক্ষীপুর মজুচৌধুরীরহাট নৌ-পথে ৫ ফেরি, শতাধিক যাত্রীবাহি বাস, ১৫ যাত্রীবাহী লঞ্চ ও কিছু সি-ট্রাক চলাচল করে। এছাড়া এ রুটে গড়ে ১৫০টি মালবোঝাই ট্রাক, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে।
এ রুটে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু মেঘনায় নাব্যতা সংকট এবং ডুবোচরের কারণে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের প্রতিনিয়তই পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
এ নৌ-পথে চলাচলকারী কামাল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি ও লঞ্চ প্রায়ই আটকে যায়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। এ কারণে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে যায়। এতে ঘাটে ৪-৫ দিন পর্যন্ত পণ্যবোঝাই শতাধিক ট্রাককে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছেন, ভোলা-মজুচৌধুরীহাটে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে ফেরি চলাচল করতে পারে না। এতে ট্রিপ সংখ্যা কমে যায়, বেড়ে যায় যাত্রীদের ভোগান্তি। এ সমস্যার কথা প্রতি বছরই ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়।
ভোলা-মজুচৌধুরী নৌ-পথে কয়েকটি পয়েন্টে পানি কম থাকার কারণে ভাটার সময় ডুবোচরে ফেরি আটকে যায়, জোয়ার আসলে স্বাভাবিক হয়। এ সমস্যার কারণে ফেরির ট্রিপ কম হয়। এ সমস্যার সমাধান হলে এ রুটে যাত্রীদের যাতায়াত আরও বাড়তো। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার অবহিত করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ ভোলা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ডুবোচরের বিষয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ বা লঞ্চের মালিকরা লিখিতভাবে জানালে তিনি ড্রেজিংয়ের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবেন। এছাড়া ভোলা-লক্ষীপুর মজুচৌধুরিহাট নৌ-পথে কিছু অংশ ভোলার মধ্যে বাকি অংশ লক্ষীপুরের মধ্যে। ভোলায় কোন কোন পয়েন্টে নাব্যতা ও ডুবোচর ফেরি বা লঞ্চ আটকে পড়ে তা ফেরি কর্তৃপক্ষ ও লঞ্চের মালিকরা জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।