মোঃ আতিকুর রহমান আজাদ,কালকিনি-ডাসার প্রতিনিধিঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহনের দিনক্ষন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীদের সমর্থকদের প্রচার ও প্রচারনা ততই বাড়ছে। মাদারীপুর সদরের আংশিক(পাচটি ইউনিয়ন)কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে ২২০ মাদারীপুর-৩ আসন। এই আসনটিতে ছয়জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধতা পেলেও হাকডাক দিয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছে নৌকা ও ঈগল।
মাদারীপুর-৩ আসনটিতে ৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে মরহুম মতিয়ার রহমান এবং ৭৩ এর নির্বাচনে মরহুম আবদুর রাজ্জাক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পরে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সৈয়দ আবুল হোসেন নির্বাচিত হন। তিনি এলাকার মানুষকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেন। ১৯৯১ সাল থেকে টানা চারবার তিনি বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এরপর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। মাদারীপুর-৩ আসনটি আওয়ামী লীগ অধ্যসুত এলাকা হিসেবে পরিচিত।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ড. আবদুস সোবহান গোলাপ নির্বাচিত হয়ে এককগুচ্ছ কর্মকান্ডের কারনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তার বাহিরে চলে গেলে, সেই তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নারী আসনের সংরক্ষিত এমপি অধ্যাপিকা তাহমিনা বেগম।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ফতসিল ঘোষনার আগথেকে মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে উপজেলা আ.লীগ, ইউনিয়ন আ.লীগের নেতাকর্মিদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলে ধরেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হলে এ আসনটিতে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করলে এখন বৈধ প্রার্থী রয়েছে ৬ জন।
দ্বিতীয় বারেও আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মনোনয়ন পান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ নিয়ে এ আসনে ঈগল মার্কা প্রতীক নিয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বার বার নির্বাচিত সভাপতি ও নারী আসনের সংরক্ষিত এমপি অধ্যাপিকা তাহমিনা বেগম।
জাতীয় পার্টির“ লাঙ্গল“ মার্কা পান মোঃ আব্দুল খালেক,তৃনমূল বিএনপির “সোনালী“ আশ প্রতীক পান প্রবীন হালদার,কৃষক শ্রমীক জনতা লীগের “গামছা“ প্রতীক পান নকুল কুমার বিশ্বাস,এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির “একতারা“ প্রতীক পান নিতাই চক্রবর্তী।
ছয়জন প্রার্থী হলেও নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন নৌকা ও ঈগল।
ভোট গ্রহনের দিনক্ষন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের সমর্থকদের প্রচার ও প্রচারনা ততই বাড়ছে।
প্রার্থীরা পথসভা সহ যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের উঠান বৈঠকে। প্রচার প্রচারনায় বাধ যাচ্ছেনা প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল। প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে গান শুনিয়ে ভোটারের মন আকৃষ্ট করতে বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে মাইক।
ড.আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন,আমি একাদশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় অনেক উন্নয়নমুলক কাজ করেছি। নৌকার বিজয়ই এলাকার উন্নয়ন। আমি বিশ্বাস করি,জনগন বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পঞ্চম বারের মত শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবে।
আমি মাদারীপুর-৩ আসনের গত পাচ বছরের উন্নয়নের তালিকা(লিপলেট) তৈরি করে জনগনের মাঝে বিতরন করছি এবং ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান করছি। ভোটারদের অনেক সারা পেয়েছি, আশা করি আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে দ্বিতীয় বারের মত বিপুল ভোটে বিজয় করবে।
সতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম জানান,সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংখ্যায় আছি। বিভিন্ন জায়গায় ঈগল মার্কার সমর্থকের উপর হামলা হচ্ছে,কিছুদিন আগেও একজন সমর্থকের প্রাণ গেল নৌকার সমর্থকের হামলায়। ঝুরগাও বাজারে আমার একটি নির্বাচনি ক্যাম্প নৌকার প্রার্থী নিজে গাড়ি থেকে নেমে ঈগলের সমর্থককে চর থাপ্পুর দেন,জোর করে ঘর মালিককে দিয়ে ক্যাম্পে তালা লাগিয়েও দেন। এলাকার সর্বস্তরের জনগন পরিবর্তন চায়। ভোটারের মাঝে যে উৎসাহ উদ্দিপনা রয়েছে,যদি সুষ্ঠ নির্বাচন হয় ইনশা আল্লাহ বিপুল ভোটের মাধ্যমে ঈগল মার্কা বিজয় হবে।
সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাস বলেন,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সুষ্ঠ। নির্বাচনি প্রচারনায় প্রার্থীদের আচরন বিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে আমরা খুবেই সর্তক,অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ৮ শত ৫৬টি। এ আসনে ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১শত ৩৪টি।