রাজশাহী প্রতিনিধি :
রাজশাহীতে শুক্রবার গভীর রাতেও বিচ্ছিন্নভাবে আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে দুর্বৃত্তরা একটি ভোটকেন্দ্রের পাশের চায়ের স্টলে আগুন দিয়েছে এবং একটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে এতে কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এছাড়া রাজশাহী মহানগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্রের পাশ থেকে দুটি বালতিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ১০টি ককটেল উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের মাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে শুক্রবার গভীর রাতে একটি চায়ের দোকানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কেন্দ্রর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, চারঘাট শলুয়া ইউনিয়নের মাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে কামালের চায়ের স্টলে শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে স্টলের চুলার ওপরে টানানো পলিথিন, পাটশলা দিয়ে তৈরি চাল এবং বেড়াটি পুড়ে যায়। কিন্তু মূল চায়ের স্টলটি অক্ষত থাকে। মাড়িয়া স্কুল কেন্দ্রের চৌকিদার এবং নৈশপ্রহরীসহ স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভায়।
একই রাতে রাজশাহী বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর লক্ষ্মীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়। পেছন থেকে দুর্বৃত্তরা আগুন দেওয়ার পরপরই গ্রাম পুলিশ দেখতে পেয়ে দ্রুত ছুটে আসেন এবং শুরুতেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এতে অল্পের জন্য বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় বাঘা উপজেলার এই কেন্দ্রটি।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার গভীর রাতে বিচ্ছিন্ন দুটি ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রের পাশে চায়ের স্টলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আরেকটি কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান।
এদিকে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর উপশহর প্রাইমারি স্কুলের পাশ থেকে ১০টি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বোম ডিসপোজাল ইউনিট এগুলো উদ্ধার করে। পরে সেগুলো পাশের স্যাটেলাইট টাউন স্কুল মাঠে নিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্বাচন বয়কটের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের সমর্থনে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগরীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল বের করে।
মিছিলটি মহানগরীর উপশহর প্রাইমারি স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করে। এ সময় মিছিল থেকে পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিছিল থেকে সুজন ইসলাম তৌহিদ নামে বিএনপির এক সমর্থককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম উপশহর প্রাইমারি স্কুলের (ভোট কেন্দ্র) পাশের রাস্তার ধার থেকে দুটি বালতিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা ১০টি ককটেল উদ্ধার করে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রুহুল আমিন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, মশাল মিছিলে বিস্ফোরকদ্রব্য বহন করা হচ্ছে। ওই মিছিল থেকে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। পরে সেখান থেকে বিএনপির এক সমর্থককে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা স্বীকার করেন। পাশাপাশি দুটি বালতিতে ১০টি ককটেল একটি ভোটকেন্দ্রের পাশে রাখা হয়েছে বলেও তথ্য দেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। পরে সেগুলো পাশের স্যাটেলাইট স্কুল মাঠে নেওয়া হয়। আরএমপি’র বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত পৌনে ২টার দিকে এগুলো নিষ্ক্রিয় করে।
এডিসি রুহুল আমিন আরও জানান, উদ্ধারকৃত ককটেলগুলো বেশ শক্তিশালী ছিল। আরএমপির বোম ডিসপোজাল যখন এগুলো নিষ্ক্রিয় করে তখন পুরো উপশহর এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এই ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।