নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
গত রবিবার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনে কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৯৬২ ভোটে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গত রবিবার (৭ জানুয়ারি) ফরিদপুর-২ আসনে সংসদ সদস্য পদে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে আমাকে জোর করে হারানো হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার ১১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে গট্টি, যদুনন্দী, রামনগর ও কাইচাইল ইউনিয়নের ভোট জোর করে নৌকা প্রতীকে টেবিলের ওপরে নিয়ে নেয়। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট প্রকাশ্যে কেটে নেয় নৌকার সন্ত্রাসী সমর্থকরা । তার মধ্যে বাবুর কাইচাইল, বালিয়া, জয়ঝাপ, বড়খারদিয়া, সুতারকান্দা, পোড়াদিয়া ও কৃষ্ণাডাঙ্গী কেন্দ্রের ভোট নৌকা প্রতীকে জোর করে নিয়ে নেয়। অধিকাংশ প্রিজাইডিং অফিসার ২০০ থেকে ৩০০ করে ভোট কেটে নৌকার সিল মেরে ব্যালট আগেই রেখে দিয়েছিলেন। আমার ঈগলের ভোটের ওপর নৌকা লিখে বান্ডিল করেছেন।
জামাল মিয়া আরও বলেন, আমার চোখের সামনে ভোট কেটে নিয়েছে। প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরেছে ও জাল ভোট দিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার অবগত করার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটরা আমাকে বলেন, ভেতরে কি হচ্ছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। প্রিজাইডিং অফিসারকে জানান। আমি বললাম- প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই জড়িত। তারপরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি রিটানিং কর্মকর্তাকে বারবার ভোট বন্ধের লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাও কাজ হয়নি। ভোট গ্রহণের সময় দায়িত্বরত পুলিং অফিসারকে মারধর করা হয়েছে। অন্তত ২০টি কেন্দ্র থেকে আমার পুলিং এজেন্টদের মারধর দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে।
জামাল মিয়া বলেন, প্রহসনের নির্বাচন, কারচুপির নির্বাচন ও ব্যালট ছিনতাইয়ের নির্বাচন সালথা-নগরকান্দাবাসী প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই আমি এই ফলাফল মানিনা। আমার ঈগলের অনেক ভোট নষ্ট করা হয়েছে। আমি ভোটে জিতেছি। আমাকে জোর করে ১৯০০ ভোটে পরাজয় দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের একদিন যেতে না যেতেই আমার সমর্থকদের অন্তত ২০০ বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়া হয়েছে। আমার নেতাকর্মীদের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে দোষীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জামাল হোসেন মিয়া বলেন, যে সকল কেন্দ্রে অনিয়ম, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট ও প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। সেসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে যারা অমান্য করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী, মো. আনোয়ার হোসেন মিয়া, নগরকান্দা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিক মোল্যা প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-২ আসনে জয়ী হন নৌকার প্রতীকের প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। তিনি ১ হাজার ৯৬২ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী পান ৪৭ হাজার ১৯৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া পান ৮৫ হাজার ২৩২ ভোট।