রোমান আহমেদ, জামালপুর প্রতিনিধি :
এখন শীতকাল।
চারদিকের পাকা ধানগুলো কেটে নিয়ে গেছে কৃষক। ধুধু খোলা মাঠে আনন্দে মেতে উঠেছে পাখপাখালি। এলাকার খাল, বিল, নদী-নালাগুলোতে কমছে পানি। পাওয়া যাচ্ছে ছোট বড় মাছ। এসব মাছ ও পোকামাকড় খাওয়ার লোভেই মাটিতে নেমে আসে নানান প্রজাতির দেশীয় পাখি।
তাদের ডানাঝাপটানোর ছন্দময় শব্দে প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যকে ফিরে পায় বারবার।এই দৃশ্য দেখে কিছু মানুষের ভেতরে উচ্ছ্বাস রোমাঞ্চ জাগানোর পাশাপাশি জাগায় লোভ।
এমন সময়ই ওইসব পাখি শিকারে মেতে উঠেছেন স্থানীয়রা। ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি শিকার করছে শিকারীরা।পাখি শিকার যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না। মেলান্দহের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বিলের ধারে রোপা আমনের ক্ষেতে অবাধে চলছে বক শিকার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নজরদারি ও সচেতনতার অভাবে বেড়েছে শিকার।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্ষার পর নদী-নালা, খাল বিলের পানি কমতে থাকে। এ সময় আমন ধানের জমিতে ছোট মাছ ও পোকা খেতে ছুটে আসে বিভিন্ন প্রজাতির বক। শিকারির পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে এসব পাখি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলান্দহের ফুলকোঁচা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি বিল থেকে ফাদ পেতে পাখি শিকার করছে স্থানীয়রা। বিশেষ করে বক, ঘুঘু ও মাছরাঙা ধরছেন স্থানীয়রা। এভাবে পাখি নিধন অব্যাহত থাকলে বক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে পেশাদার শিকারী না থাকলেও স্থানীয়রাই মেতে উঠেছে এই কাজে।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, ফসলের জমিতে পানি দেওয়ার সময় মাটির নিচে থেকে উঠে আসা পোকামাকড় খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের বক, শালিক, ঘুঘু, চড়ুই, ডাহুক, মাছরাঙাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি। এ সময় একশ্রেণির পাখি শিকারিরা ফাদ পেতে এই পাখিগুলোকে নিধন করছে।
তারা আরও জানান, বেশিরভাগ সকাল ও সন্ধ্যায় বক খাবারের জন্য ঝাক বেধে পানিতে নামে। সেই সময়েই মাছ দিয়ে ফাদ পেতে বসে থাকে কয়েকজন। সেই ফাদেই আটকে যায় বক। মেরে মেরে বিক্রিও করছেন তারা।
জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, আমাদের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী যেকোনো পাখি শিকার করা সম্পূর্ণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই পাখিগুলো আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এই ধরনের কোন তথ্য পাওয়া গেলে সাথে সাথে বন বিভাগকে অথবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে কঠোর পদক্ষেপ নিবে। আমাদের সকলেরই উচিৎ পাখি শিকারীদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য দেয়া।
জামালপুর বন বিভাগের কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, পাখি শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ এই আইন অনুযায়ী পাখি শিকার করার সুযোগ তাদের নেই। জনসচেতনতা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। সচেতনতার বিষয়ে মাইকিং করা হবে।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) একেএম লুৎফর রহমান বলেন, এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি এরকম ইনফরমেশন পাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জনসচেতনতার জন্য সচেতনতা মূলক কিছু ক্যাম্পেইন করতে পারি। পাশাপাশি কিছু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যদি দেওয়া হয় তাহলে এটি বন্ধ হতে পারে। বিষয়টি এখন জানতে পারলাম আমি আশা করি এই বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করবো।