নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি :
মো. আব্দুর রহমান। একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। ১৯৫৪ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়ায় সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেন আব্দুর রহমান। পিতা মো. শরিয়তউল্যা ও মাতা আয়েশা শরিয়তউল্যা।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছোট বেলা থেকেই বাবা-মায়ের খুব আদরের ছিলেন তিনি। গ্রামের সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামল প্রকৃতি, নদী-নালা ও পাখির কলতানে বেড়ে ওঠা ডানপিটে একজন আলোকিত মানুষ আব্দুর রহমান।
বর্তমানে তিনি ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি একজন পোড়খাওয়া নেতা। ৭০ বছরের জীবনে নানা ষড়যন্ত্র, চড়াই-উতরাই পার করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন ৫৭ বছর।
জন্ম: ১৯৫৪ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়ায় মা আয়েশা’র কোল আলোকিত করে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেন আব্দুর রহমান। পিতা মো. শরিয়তউল্যা ও মাতা আয়েশা শরিয়তউল্যার খুব আদরের ছিলেন মো. আব্দুর রহমান। গ্রামের সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা প্রকৃতি, নদী ও পাখির কলতানে বেড়ে ওঠা ডানপিটে আব্দুর রহমান।
রাজনৈতিক জীবন শুরু: স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টররের দায়িত্ব পালনকালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গেলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর আব্দুর রহমান তখন বোয়ালমারীর খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং সহপাঠীদের নিয়ে শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন এবং বোয়ালমারীতে কালুখালী -ভাটিয়াপাড়া রেল সংযোগে টানা চারঘণ্টা রেল অবরোধ করে রাখেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদী চরিত্র থেকেই রাজনীতিতে আসেন। সেই থেকে শুরু তার রাজনৈতিক জীবন।
রাজনীতিতে পদমর্যাদা: ১৯৬৯ সালে বোয়ালমারী উপজেলার খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তুমুল ছাত্র জনপ্রিয়তার কারণে। কলেজে অধ্যয়ন অবস্থায়, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য, এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে আব্দুর রহমানকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। তিনি ১৯৮৬-৮৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন।
তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০০১-০২ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্বেক্ষক সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৭ তম সম্মেলনে, ২০০২-০৩ ইং মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোট বেশি পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম সম্মেলনে ২০০৯-১২ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২য় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত জন। ২০তম সম্মেলনে ২০১৬-১৯ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম সদস্য হন এবং একইসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ: ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যুবকদের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে সংঘবদ্ধ করেছেন। ভারতের রানাঘাট ক্যাম্পে ট্রেনিং নেন এবং ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আব্দুর রহমান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেন।
শিক্ষা জীবন: বোয়ালমারী খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি,ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ থেকে এইচএসসি, কারাবন্দী অবস্থায় পুলিশ প্রহরায় বোয়ালমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ/বিএস পাশ করেন। মেধাবী ছাত্র নেতা আব্দুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সফলতার সাথে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং যথাক্রমে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য: ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে, তখন মূলত আব্দুর রহমান তাকে ঘিরেই তার নেতৃত্বের প্রতি নিঃশর্ত আস্থাশীল এবং আনুগত্য প্রকাশ করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা বিভিন্ন সময়ে আব্দুর রহমান কে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব টুকু সঠিকভাবে পালন করেছেন এবং এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তার আদর্শ ও প্রিয় ব্যাক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা।
পারিবারিক ও কর্মজীবন: আব্দুর রহমানে পেশায় ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।
প্রিয় পোশাক ও খাবার: সাদা পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা। প্রিয় খবার- মাগুর মাছের ঝোল ও আমন ধানের চাউলের ভাত।
৩বার সংসদ সদস্য: ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ ২০১৪ সালের দশম ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মো. আব্দুর রহমান।
২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মোঃ আব্দুর রহমান।
উন্নয়ন: রাজবাড়ী-বোয়ালমারী ভাটিয়াপাড়া হয়ে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত রেল চালু, চন্দনা-বারাশিয়া নদী খনন, মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক, কমপক্ষে ১১ শত কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরণ, অডিটোরিয়াম, ডাকবাংলো, তিন উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা, স্কুল-কলেজের ভবন, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, তিন উপজেলায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভসহ অসংখ্যক উন্নয়ন সাধিত করেছেন।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএম আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ফরিদপুর-১ আসন আওয়ামী লীগের ঘাটি। আমরা প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহমানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করেছি। আব্দুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তিনি একজন পোড়খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এই প্রথম ফরিদপুর-১ আসনে জননেতা আব্দুর রহমানকে মন্ত্রী দিয়ে অত্র এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে সম্মানিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ফরিদপুর-১ আসনের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু বলেন- ফরিদপুর -১ আসনের জনগনের স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি জননেতা আব্দুর রহমানের মন্ত্রিত্ব পাওয়া।প্রধানমন্ত্রীকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।একজন সুযোগ্য ব্যক্তি তার যোগ্য স্থানে স্থান পেয়েছেন।আব্দুর রহমান আমাদের গর্ব।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেন, আমার দীর্ঘ ৫৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মন্ত্রিত্ব একটা স্বীকৃতি। এটা নিঃসন্দেহে এটা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। খুশি ও আনন্দের বিষয়। জাতির জনক, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দায়িত্ব সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করাই আমার জন্য একমাত্র বড় চ্যালেঞ্জ। এতে আমার আরও বড় বেশি দায়িত্ব, কর্তব্য বাড়ল। আমার জীবন উৎসর্গ করলেও এই ঋণ শোধ করার মতো নয়।
তিনি আরও বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় গত ৪০ বছরের যে উন্নয়ন তা আমার এমপি থাকাকালীন দশ বছরে করেছি। আগেও ছিলাম এবং আগামী দিনগুলোতে আমার প্রিয় জনপদের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার পাশাপাশি অবশিষ্ট উন্নয়ন শেষ করতে চাই।