মোঃ ফিরোজ ফরাজী রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
গাঢ় সবুজ লতায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তরমুজ গাছ। এর ফাঁকে ফাঁকে ফলও ধরছে কোনো গাছে। কি হঠাৎ করেই শেকড় নিস্তজ হয়ে মরছে গাছ। বালাই নাশক (কীটনাশক) প্রয়াগও করেও হচ্ছে না কোন সমাধাণ?
দক্ষিণাঞ্চল তরমুজ উৎপাদন অন্যতম এলাকা হিসাবে পরিচিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজলার দুইটি চর এভাবেই অজানা কারণ মরছে তরমুজ গাছ। ফলে বিপাকে পড়ছে চাষীরা। এটি কোন রোগ নাকি ভাইরাস তা এখনও নির্ণয় করতে পারনি কৃষি বিভাগ! সমস্যাটি সমাধাণ এর চেষ্টা চলছে জানিয়ে কৃষি বিভাগ , এই মুহূর্ত খুবই অল্প পরিসর গাছ আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর পরিধি যেনো না বাড়ে এ জন্য গাছ মরে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করতে বিশষজ্ঞদের গবেষণার প্রয়াজনীয়তা রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নর কাউখালী ও চরইমারশন চরের বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তরমুজ এর আবাদ হয়েছে। এই দুই চরই ফল তরমুজ গাছ আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়ার ঘটনা বেশি। তরমুজ চাষীরা বলছেন, আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। তা না হলে পাশের গাছও আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
কাউখালী চরের তরমুজ চাষী মাসুম সিকদার বলন, ‘আমি তিন কানি জমিতে তরমুজ দিছি। ১২ হাজার গাছর চারা ছিল। এখন তিন ভাগের একভাগই মরে গেছে। এখন দুই ভাগ আছে। তাও একর পর এক শেকড় এবং পাতা শুকিয় মরছে।এটার কারণ কি বুঝি না? পানি দিছি, ঔষধ ব্যবহার করছি কোনটাতই কোন কাজ হচ্ছে না? অনেক টাকা খরচ করতেছি। ফল ধরছে, এমন গাছও মরে যাচ্ছে। সবাই-ই দাদন আর ঋণের টাকায় তরমুজ দিছে। এখন লোকসান হলেতো আমরা মাঠে মাইর!
ওই চরের আরেক চাষী মনির হাওলাদার বলেন, ‘আমি সাত কানি জমিতে তরমুজ দিছি। আমার প্রায় তিন কানি জমির গাছ মরছে । একদিকে লাগাই, আরেকদিকে মরে। সকালে দেখি ভাল,বিকালে দেখি গাছ মরছে । কোন ঔষধ এও কাজ হয় না। এখন চার কানি জমিতে গাছ আছে, তাও অল্প অল্প মরছে। সব বিনাশ। আমার তিন কানিতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়।’
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার এ উপজলায় ইতামধ্য ৪ হাজার হেক্টর জমিত তরমুজ আবাদ করা হয়। তবে এ মৌসুম সাড় ৮ হাজার হক্টর জমিত তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং অনুকল পরিবশ থাকলে সাড় ৫ শ’ কাটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন কৃষি বিভাগ। কি অজানা কারণে গাছ মরে যাওয়ায়? ক্ষতির মুখে পরেছেন তরমুজ চাষীরা। কৃষি বিভাগ বলছ, ইতামধ্য ৬-৭ হেক্টর জমির তরমুজ গাছ মারা গেছে । তবে কৃষকরা বলছন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এ প্রসঙ্গ উপজলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রতিবেদক কে গাছ মরে যাওয়ার কারণ সম্পর্ক প্রাথমিকভাব চারটি ধারণা দিয়ছেন ‘এক. নমাটাডা নামক সুতাকমির আক্রমণ। দুই. জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হওয়া কিংবা রোগ প্রতিরাধ ক্ষমতা কম যাওয়া। তিন. একই জমিত বার বার তরমুজ আবাদ। চার. কোন পরামর্শ ছাড়াই অতিরিক্ত সার এবং বালাই নাশক (কীটনাশক) প্রয়াগ।’
এই কৃষি কর্মকর্তা বলন, ‘এই চারটির মধ্য যে কোন সমস্যার কারণে গাছগুলা মরতে পারে? কি সঠিক কারণ নির্ণয় করতে বিশষজ্ঞদর গবেষণার প্রয়াজনীয়তা রয়েছে। সমস্যা সমাধানের চষ্টা চলছে। আমাদর মাঠপর্যায়র উপসহকারী কষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিছেন।’
স্থানীয় কৃষকরা জানান, তরমুজ উৎপাদনর জন্য বিখ্যাত এই জনপদ দিনদিন তরমুজ আবাদ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণহিসাবে তারা বলছে, গত কয়ক বছর ধরেই কোন না কোন রোগ কিংবা ভাইরাস তরমুজ চাষীদের ক্ষতি হইছে। এছাড়া প্রাকতিক দুর্যাগতো আছে ই। ফলে দাদন ও ঋণর জালে জর্জরিত। তাই লোকসান দিয়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকি নিব না অনেকই বলেন কৃষকরা
।
ছবির ক্যাপশন: অজানা কারণে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নর কাউখালী চর ও চর ইমারশন এভাবেই মরছে তরমুজ গাছ। ছবিটি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নর কাউখালী থেকে তোলা।