২০২৩ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়। যানবাহনের তুলনায় অপ্রতুল সড়ক, ফুটপাত দখল, অচেতনতা এবং একই সড়কে স্বল্প ও দ্রুত গতির যানবাহন চলাচলের মতো কারণকেই দায়ী করা হচ্ছে এসব দুর্ঘটনার জন্য।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে বলে জানানো হয়।
তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মোট ৬ হাজার ৯১১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং আহত ১১ হাজার ৪০৭ জন। সে অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পথচারী, এরপরই মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। সড়কে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মিত উঁচু স্পিড ব্রেকার মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা বাড়ার মূল কারণ বলে মনে করছে সংগঠনটি।
এ ছাড়া সার্বিক সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির ১.৫ শতাংশের বেশি হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার কমাতে দক্ষ চালক তৈরি, সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা বাড়ানোর মতো আলাদা আলাদা ১০টি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনার কমাতে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো কার্যকর করা গেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলে হতাহতের সংখ্যাও কমে আসবে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ জানিয়ে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ২. বেপরোয়া গতি, ৩. চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, ৪. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্র্যাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, ৮. দুর্বল ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, ৯. বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
দুর্ঘটনা রোধে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। সুপারিশগুলো হলো-
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে।
৩. বিআরটিএ`র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে।
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে।
৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ও লিগ্যাল ইকোনমিস্ট মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাসিনা বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. রাশেদ খান, জয়েন্ট সেক্রেটারি ড. জাহিদুল ইসলাম, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জাহাঙ্গীর, বুয়েট অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ রাব্বি, রোড সেফটি ওয়াচ ডটকম এর সম্পাদক হারুন অর-রশীদ, রেজিন্ট ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিসার্চ অ্যান্ড ডিজিটাল ইন্টারভেনশন এক্সপার্ট আমিনুর রহিম।