বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের সঙ্গে জড়িত ইমতিয়াজ হোসেনকে আজ দুপুর ২টার মধ্যে স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার করতে হবে।
এছাড়া আনাস ফেরদৌস, অনিরুদ্ধ মজুমদার, ইমন, সায়েম মাহমুদকেও স্থায়ী একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এ সময় তারা ৩১ মার্চের সব পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত অনুপ্রবেশে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। এই মর্মে শুক্রবার বুয়েট ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি পেশ করেছিলাম। সেগুলোরই বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সকলকে সম্যক অবহিত করছি এবং ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী আমাদের পরিবর্তিত দাবি পুনরায় পেশ করছি।
তারা বলেন, গতকাল আমরা বুয়েটের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলনের প্রথম দাবি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি, ‘বুয়েটে সকল রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ এই নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে আমরা শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল এর দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন কর্তৃক ইমতিয়াজ রাব্বির হল বহিষ্কার ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হলেও বুয়েট থেকে তার স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। আমরা শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সাথে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের একাংশের নাম পরিচয় আমরা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। তারা হলো এ. এস. এম. আনাস ফেরদৌস, মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম ইমন এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত। আমরা ইমতিয়াজ রাব্বির মতোই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় এদের সকলের বুয়েট থেকে স্থায়ী একাডেমিক এবং হল বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। এদের বাইরে বাকি আরও যারা জড়িত ছিলো যাদেরকে আমরা শনাক্ত করতে পারিনি, তাদের সকলকেই যেনো বুয়েট প্রশাসন অনতিবিলম্বে শনাক্ত করে এবং উপরে উল্লিখিত অভিযুক্তদের মতোই একই মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা করে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, তারা কেন কিভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা শুক্রবার আমরা প্রশাসনের কাছে চেয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য আমাদেরকে মৌখিক ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা এই মুহূর্তে এই দাবিটির বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
স্টুডেন্টদের নিরাপত্তার জন্য ‘রাত সাড়ে ১০টার পরে সকল ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ’ এবং যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদেরকে রাত সাড়ে দশটার বেশি সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে সেক্ষেত্রে ডিএসডাব্লিও স্যারের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।
(ক) এক্ষেত্রে যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেয়া নাই হয়ে থাকে, তাহলে ডিএসডাব্লিও স্যারের প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতরা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএসডাব্লিও স্যার নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ।
(খ) আর যদি বহিরাগতদের পারমিশন দেয়া হয়ে থাকে তাহলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রটোকল: ১১ অক্টোবর, ২০১৯ এ দেয়া ঘোষণা ‘বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ ইহার লঙ্ঘন করেছেন ডিএসডাব্লিও স্যার।
(গ) ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাব্লিউ আওতাধীন। উনি বলেছেন, এ জায়গাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে উনি অনুমতি দেননি। এক্ষেত্রে উনার অনুমতি ব্যতীত কে বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতা কার এটি প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ৬ দফা দাবির পরিবর্তিত রূপ পেশ করা শেষ হলো। তবে আমাদের আন্দোলন নিয়ে কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিবর্গকে ফেসবুকে পোস্ট করে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে দেখি। আমরা তাদের এমন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। আমরা সবসময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা ‘বুয়েটে সকল রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যেকোনো মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমরা আবারও সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এ সকল দাবি কেবলমাত্র কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সকল রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।