গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাবারুনীর স্নানোৎসব শুরু হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে পৌনে দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ স্নানে অংশ নিচ্ছেন। উৎসবকে কেন্দ্র করে ওড়াকান্দিতে পাঁচ দিন ব্যাপী মহাবারুনীর মেলাও শুরু হয়েছে।
পুণ্যব্রক্ষ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১৩তম অবির্ভাব তিথি উপলক্ষে শনিবার ভোর ৬টা ২৬ মিনিটে গদীনশীল ঠাকুর ও মতুয়ামাতা সীমা ঠাকুর ও পদ্মনাভ ঠাকুর কামনা সাগরে স্নান করে স্নানোৎসবের শুভ সূচনা করেন।
এরপর পাঁচ কুড়ির দল স্নানে অংশ নেয়। তার পর থেকে চলতে থাকে পুণ্যার্থীদের স্নানোৎসবের পালা। যা শেষ হবে রাতে।
কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান ও হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ পুরুষ সুব্রত ঠাকুর জানান, স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা থেকে পুণ্যার্থীরা এসেছেন। তারা দলে দলে ঢাক, ঢোল, শংখ, কাশি বাজিয়ে লাল নিশান উড়িয়ে ‘হরি বোল’ ধ্বনিতে এলাকা প্রকম্পিত করে স্নানোৎসবে অংশগ্রহণ করছেন।
“সারা দিন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পুণ্যার্থী পাপ মুক্তি ও পাপ মোচনের আশায় স্নান করবেন। স্নান সেরে ভক্তরা ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম করে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঠাকুরের কৃপা লাভের জন্য প্রার্থনা এবং গড়াগড়ি করেন।”
এ বছর ১০ লাখ পূণ্যার্থী স্নানোৎসবে অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানান সুব্রত ঠাকুর।
শ্রীধাম ওড়াকান্দি বরুনীর স্নান ও মেলা কমিটির সদস্য ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, “হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি মহা তীর্থস্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আছেন বলেই আমরা উৎসবের আমেজে স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছি। ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় উৎসব করতে পারছি।”
মহাবারুনীর স্নানোৎসবে
তিনি স্নানোৎসবে আগত ভক্তদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনায় প্রর্থনা করার আহ্বান জানান।
বাগেরহাট জেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামের নির্মল ওঝা বলেন, “এটি বারুনী উৎসবের বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্নানোৎসব ও মেলা। এখানে পূণ্য লাভের আশায় স্নান করেছি।
“ওড়াকান্দিতে স্নান করলে পাপ মোচন হয় বলে প্রচলিত রয়েছে। এ বিশ্বাস আমাদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ পৌনে ২শ’ বছর ধরে।”
নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসাবে খ্যাত আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালে মহা বারুনীর দিনে কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীর ব্রাহ্ম মুহূর্তে জন্ম নেওয়া হরিচাঁদ ঠাকুর ১২৮৪ সালে ৬৬ বছর বয়সে জন্মের একই দিনে ও তিথিতে তিরোধানে যান।
বাবা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ ছেলের মধ্যে হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন দ্বিতীয়। বাল্য নাম হরি হলেও ভক্তরা তাকে হরিচাঁদ নামে ডাকতেন।
মহাবারুনীর স্নানোৎসবে
এই পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের জন্য সাফলীডাঙ্গা গ্রাম হয়ে ওঠে ধন্য। এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে। এটি জেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
পৌনে ২শ’ বছর আগে ঠাকুরের অবির্ভাব দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসবের প্রচলন করা হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর এ উৎসব চলছে।