মোঃ আব্দুস সালাম-চিরিরবন্দর ( দিনাজপুর ) প্রতিনিধি :
প্রাকৃতিক সোন্দর্য নিয়ে সাদা ফুলের বর্ণিল সাজে সেজেছে চিরিরবন্দরে সজিনার ফুল, সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামল ভরা আমাদের এ বাংলাদেশের একেকটি ঋতুর একেক রুপে ও রঙ নিয়ে হাজির হয়। ঠিক তেমনি চিরিরবন্দর উপজেলার বাড়ির আনাচে-কানাচে ও রাস্তার পাশে থাকা সজিনার গাছগুলোতে থোকায় থোকায় সাদা সাদা ফুলে ভরে উঠেছে। মৌ মৌ করছে চারিপাশে। সজিনা গাছের ডালের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফুল আর ফুল। আর কোথায় কোথায় চুপে চুপে সজিনা গাছের ফুল ঝরে পড়েছে। তাই পাতা শুন্য ডালে থোকা থোকা সাদা ফুলের শোভা দেখে সকলেই মহিত হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ৫ হেক্টর জমিতে সজিনা গাছ আছে। বাৎসরিক মোট উৎপাদন আনুমানিক ১২৫ মে টন।
চিরিরবন্দর উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়নে গ্রামাঞ্চলে গাছে গাছে ভরে গেছে সজিনা ফুল। ফাল্গুন মাস জুড়ে সজিনা গাছে ফুল আসার মৌসুম।
চৈত্র মাসে ফুল থেকে হয় সবুজ ডগা, আর বৈশাখে সজিনা। সবার কাছেই খাদ্য হিসেবে সুস্বাদু বেশ প্রিয় তরকারি। বৈশাখের গরমে পানতা ভাত ডাল সজিনার সুস্বাদু তরকারি সব গ্রামের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের কাছে অনেক প্রিয় খাবার। সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেরা ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সজনে গাছ ৩০০ ধরনের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। সজনের বাকল, শিকড়, ফুল-ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধি গুণ আছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং মৌসুমি সবজির মধ্যে সজনে অন্যতম। যা দেশের সব গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়। ড্রামস্টিক, মরিঙ্গাসহ দেশে-বিদেশে সজিনা বহু নামে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে সজিনা নামেই পরিচিত। সজিনার বহুবিধ ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।
সরেজমিন চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় প্রচুর সজিনার গাছ রয়েছে। শীতের রিক্ততা কাটিয়ে এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজিনা গাছ। যত্নে নয় তবে রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায় এবং ডোবা নালা পুকুরের আশেপাশে, অযত্ন আর অবহেলায় গাছে গাছে বাতাসে দোল দিচ্ছে সজিনা ফুল। অথচ কিছুদিন পরই বেশ কদর বাড়বে। একটি সজিনা গাছ থেকে গৃহস্থরা সজিনা বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা। আর বহুগুণে গুণান্বিত যাদুকরি সবজি সজিনা। ঔষধি গুণাগুণে ভরা কিন্তু কোনো উৎপাদন খরচ নেই, অধিক লাভজনক। বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন সবজি সজিনা।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সজনেতে আ্যানিমিয়া, জয়েন্ট পেইন, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, হার্ডপেইন, ব্লাডপেসার, কিডনিতে পাথর ধ্বংস, মায়ের দুধ বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। সজিনা গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন উদ্ভিদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বহুবিধ খাদ্যগুণ সম্পন্ন হওয়ার দক্ষিণ আফ্রিকায় সজনে গাছকে যাদুকরী গাছ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
১০ নং পুনটি ইউনিয়নের গোবিন্দ পুর গ্রামের মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, হাট-বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন সবজি সজনে বহু গুণে ভরা, সুস্বাদু সব সজনে ডাঁটা। উৎপাদন খরচ নেই, বললেই চলে অধিক লাভজনক। ১০ নং পুনট্রি তেমন সজিনার চাষ হয় না। গ্রামের সব গাছে ফুলে ফুলে মৌ মৌ করছে চারিদিক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা- জোহরা সুলতানা শারমিন বলেন, চিরিরবন্দরে ৫ হেক্টর জমিতে সজিনা গাছ আছে ।
আমি কৃষককে সজিনার গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করছি। তিনি আরো জানান, যেসব এলাকায় সজিনার গাছ নেই ঐ সব এলাকায় কৃষকদের সজিনার গাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সজিনাতে পুষ্টিগুণ অনেক। উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় সজিনার গাছ লাগানো হচ্ছে। আগামীতে সজিনার গাছ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী তিনি ।
